রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা তিনটা ৯ মিনিট ২ সেকেন্ডে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরার আমবাসায়। এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছাকাছি। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৫।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৭৬ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরায়।আমাদের আগরতলা (ত্রিপুরা) প্রতিনিধি জানান, ত্রিপুরায় রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ধরা পড়েছে ৫.৭।এ

ত্রিপুরা দুর্যোগ প্রতিরোধ দপ্তরের আধিকারিক শরৎ দাস বলেন, ত্রিপুরার ধলাই জেলা এই কম্পনের উৎসস্থল। এর গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৮ কিলোমিটার গভীরে। ত্রিপুরায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত আর্থ অবজারভেটরির তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ৯মিনিটে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব এবং আগরতলা থেকে ৭৬ কিলোমিটার পূর্বে। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল ত্রিপুরার আম্বাসা এলাকায়, ভূপৃষ্ঠের ৩৬ কিলোমিটার গভীরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫।

বিকালে অফিস ছুটির ঘণ্টা দুই আগে রাজধানীর ভবনগুলো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলে আতঙ্ক তৈরি হয়। অনেকেই ভবন ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।পূর্ব ও দক্ষিণের সিলেট, কুল্লিøা, চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়াও মধ্য ও উত্তরের অধিকাংশ জেলায় এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে খবর দিয়েছেন প্রতিনিধিরা। তাৎক্ষণিকভাবে দেশের কোথাও ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ত্রিপুরায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না সে তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো প্রাথমিকভাবে জানাতে পারেনি। গত দুই বছরের ভূমিকম্প: ২৩ অগাস্ট ২০১৬: মিয়ানমারের মলাইকে ৫ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে।১ অগাস্ট ২০১৬: মিয়ানমারের পাকুক্কু এলাকায় ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয় অনুভূত হয় যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে।

২৭ জুলাই ২০১৬: মিয়ানমারের পাকুক্কু এলাকায় ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয় অনুভূত হয় যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে।২৭ জুন ২০১৬: খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ৪ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চট্টগ্রাম অঞ্চলে।১৩ এপ্রিল ২০১৬: মিয়ানমারে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো বাংলাদেশ। কয়েকটি ভবন হেলে পড়ে, হুড়োহুড়িতে আহত হয় বহু মানুষ।৫ এপ্রিল ২০১৬: ভারতের মেঘালয়ে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় ঢাকাসহ বাংলাদেশের উত্তর অংশের বিভিন্ন জেলায়।

১ এপ্রিল ২০১৬: ভারতের মনিপুর অঞ্চলে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে হুড়োহুড়ির মধ্যে আতঙ্কে মৃত্যু হয় পাঁচজনের। আহত হয়ে ঢাকা ও সিলেটে হাসপাতালে ভর্তি হন অর্ধশতাধিক। বেশ কিছু ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা যায়।৩০ অক্টোবর ২০১৫: ভারতের আসামে ৪ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলেও।

২৮ জুন ২০১৫: ভারতের আসামে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে।১৬ মে ২০১৫: নেপালে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা।২৭ এপ্রিল ২০১৫: নেপালে ৫ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা।২৫ এপ্রিল ২০১৫: নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে আট হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়; ক্ষয়ক্ষতি হয় ভারত ও বাংলাদেশেও। রিখটার স্কেলে ৪ থেকে ৪ দশমিক ৯৯ মাত্রাকে মৃদু ভূম্পিকম্প হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া ৫ থেকে ৫ দশমিক ৯৯ মাত্রাকে ‘মাঝারি’, ৬ থেকে ৬ দশমিক ৯৯ মাত্রাকে ‘শক্তিশালী’, ৭ থেকে ৭ দশমিক ৯৯ মাত্রাকে ‘ভয়াবহ’ এবং মাত্রা ৮ এর বেশি হলে ‘অত্যন্ত ভয়াবহ’ ভূমিকম্প বিবেচনা করা হয়।