ঢাকার গুলশানে ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকা-ের ঘটনা দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত নাশকতা- তা খতিয়ে দেখতে সব পক্ষকে নিয়ে তদন্ত করতে বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।এসব স্থাপনার অগ্নি নিরাপত্তা ঠিকঠাক আছে কি না, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তা দেখার কথা ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেটি করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।মঙ্গলবার দুপুরে রিয়াজুল হক যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছান, তখনও ভেতরে আগুন জ¦লছিল। রাত ২টার পর ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন নেভাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি গাড়ি।

পরিস্থিতি দেখার পর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগে। কখনো বস্তির ঘর পুড়ে যায়, কখনো দোকানপাট পুড়ে যায়। সেখানে যারা বসবাস করত, তারা চলে গিয়ে আরও কিছু নতুন লোকজন সেখানে বসবাস করা শুরু করে। এভাবে চলতে পারে না।তিনি বলেন, গুলশানে কীভাবে আগুন লেগেছে- তা নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন লাগিয়েছে তা তদন্ত করে খুঁজে বের করতে হবে।এই তদন্তের দায়িত্ব কেবল ফায়ার সার্ভিসের ওপর না দিয়ে পুলিশ, দোকান মালিক ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করে আগুনের কারণ খুঁজে বের করতে বলেন তিনি।রিয়াজুল হক বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা হলে কীভাবে তার সমাধান করা যায় সে বিষয়েও ওই তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে।

ঠিক কীভাবে এ মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও ব্যবসায়ীদের কারও কারও অভিযোগ, এটা নাশকতার ঘটনা।মার্কেটের দ্বিতীয় তলার একটি খেলনার দোকানের মালিক দেলোয়ার হোে তিনি বলেন, যারা মার্কেট ভাঙার ষড়যন্ত্র করছিল, তারাই আগুন দিয়েছে। এই মার্কেটটা ঘিরে হাজার কোটি টাকার ব্যাবসা হত। সবার জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসিসি কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি ১৯ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন সিদ্দিকী জানান, সাত বিঘা জমির ওপর এই মার্কেটের পাকা মার্কেট অংশটি আছে ১৯৬২-৬৩ সাল থেকে। ১৯৮২ সালে সিটি করপোরেশন কাঁচা মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেয়।এই ব্যবসায়ী জানান, ২০০৩ সালে মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়ে মালিক সমিতির সঙ্গে কথা না বলেই এই মার্কেটের জায়গায় ১৮ তলা গুলশান ট্রেড সেন্টার নির্মাণের দরপত্র দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েও তা করতে অপারগতা জানালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মেট্রো গ্রুপের আমিন অ্যাসোসিয়েটস ওভারসিজ কোম্পানি ওই কাজ পায়।কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই চুক্তি স্থগিত করে ভবনে ডিসিসির মালিকানা বাড়াতে বলা হয়। এরপর ডিসিসির মালিকানা বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করে নতুন চুক্তি হয়।

ডিসিসি কাঁচাবাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি শের মোহাম্মদ বলেন, এই মার্কেট নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মামলা চলছে। সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং মেট্রোগ্রুপ এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত।মার্কেটের আগুন কীভাবে লেগেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, একটা বিল্ডিং কলাপস করেছে। কোনো ক্যাজুয়ালটি হয়নি। এখানে কমবাস্টেবল ও ফ্লেইম্মে লিকুইড ছড়িয়ে আছে। ডেঞ্জারাস জিনিসপত্র আছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, নাশকতা নয়, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুন লেগেছে বলে তিনি ধারণা করছেন।