গাইবান্ধা-১ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মনজুরুল ইসলামের (লিটন) দাফন সোমবার বিকেলে সম্পন্ন হয়েছে। গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। সোমবার বাদ আছর গাইবান্ধ জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে মরহুমের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদসহ জেলা উপজেলার নেতাকর্মী ও কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাংসদ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ গাইবান্ধায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। বেলা একটার পরে তাঁর মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙা রেলস্টেশন-সংলগ্ন ফাঁকা জমিতে নামানো হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহাবাজে নিজের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর তৃতীয় জানাজা শেষে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার পাশের কবরে সাংসদকে দাফন করা হয়।সকাল ১০টার পরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মনজুরুল ইসলামের দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সাংসদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রীর পরে সাংসদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, মাহবুব উল আলম হানিফ ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংসদকে কারা, কেন হত্যা করেছেÑএ বিষয়ে এখনো অন্ধকারে পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করছে। পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ১৮ জনকে আটক করেছে। তাঁরাও জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতা-কর্মী বা সমর্থক বলে জানা গেছে।সুন্দরগঞ্জের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি ছিলেন সাংসদ মনজুরুল। তিনি জামিনে ছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে সাংসদবিরোধী একটি পক্ষ সক্রিয় হয়েছিল। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতিতে বিরোধ থাকবেই। তবে মনজুরুলের সঙ্গে দলের কারও এমন বিরোধ ছিল না যে তাঁকে খুন করাতে হবে।

গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে শাহবাজ এলাকায় নিজ বাড়িতে আততায়ীদের গুলিতে আহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপি। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তিনি স্ত্রী ও ১ ছেলে রেখে গেছেন।এর আগে সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এমপি লিটনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে হেলিকপ্টারে করে লিটনের লাশ সুন্দরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অসংখ্য গুণগ্রাহী শরীক হন।জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো.সারওয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরে চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজের নেতৃত্বে হুইপবৃন্দ, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে বিরোধী দলীয় হুইপ মো. নূরুল ইসলাম ওমর মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।এর আগে ১ জানুয়ারি রোববার দুপুরে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল মাঠে এমপি লিটনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার লাশ হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়।