গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, চক্রান্তকারীরা আগে লিটনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, পরে তাকে হত্যা করেছে। ছেলেটি ভালো ছিল, বিদেশে পড়াশুনা করেছে। জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে।সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা গেছে, সভায় মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ও আপিল বিভাগের বিচারপতি বজলুর রহমানের মৃত্যুতে দুটি পৃথক শোক প্রস্তাব তোলা হয়। পরে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী লিটনের প্রশংসা করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, লিটনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্যই শিশুর পায়ে গুলি করার ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। আসলে সে তখন আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছিলো। সেটি প্রকাশ না করে শিশুর পায়ের গুলির ঘটনা ফলাও করে প্রচার করা হয়। ফলে তার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
তিনি আরও বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাত জন এমপিকে হত্যা করা হয়। যাদের মধ্যে রানিং এমপি আহসানুল্লাহ মাস্টার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকেও হত্যা করা হয়। কাজেই ষড়ন্ত্রকারীদের চক্রান্ত নতুন নেই।এদিকে, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।সোমবার বাদ আছর গাইবান্ধ জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে মরহুমের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদসহ জেলা উপজেলার নেতাকর্মী ও কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে শাহবাজ এলাকায় নিজ বাড়িতে আততায়ীদের গুলিতে আহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপি। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তিনি স্ত্রী ও ১ ছেলে রেখে গেছেন।এর আগে সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এমপি লিটনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে হেলিকপ্টারে করে লিটনের লাশ সুন্দরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অসংখ্য গুণগ্রাহী শরীক হন।জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো.সারওয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরে চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজের নেতৃত্বে হুইপবৃন্দ, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে বিরোধী দলীয় হুইপ মো. নূরুল ইসলাম ওমর মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।এর আগে ১ জানুয়ারি রোববার দুপুরে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল মাঠে এমপি লিটনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার লাশ হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়।