নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়নি, বরং রাতের আঁধারে চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।তিনি বলেন, অনেক বুদ্ধিজীবী বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন যে হতে পারে, এটি তার মহড়া।কিন্তু এখানে চুরি হয়েছে।ডাকাতি হলে ধরা যেতো। ডাকাতকে ধরা যায়, চোরকে নয়। ডাকাতের বিচার করা যায়, চোরের না। তাই বুদ্ধিজীবীদের বলবো, বুদ্ধি কম খাটিয়ে সাধারণের মতো ভাবুন।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ভয়েস অব ডেমোক্রেসির আয়োজনে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকার: প্রেক্ষিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গয়েশ্বর।তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাওয়া আর ট্রাকের নিচে মাথা দেওয়া এক কথা। আত্মহত্যা মহাপাপ, তার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আরও বড় পাপ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, ভোট কেন্দ্রগুলোতে সকাল ৯টার আগে এবং বিকেল ২/৩টার পর থেকে আর কোনো ভোটার দেখা যায়নি। অথচ ভোট গণনা হয়েছে ৩৯ থেকে ৮৩ শতাংশ। এত ভোট আসলো কোথা থেকে! এখানে চুরি হয়েছে স্পষ্ট। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের পক্ষে দায়িত্ব নিয়ে থাকা এই নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জে ‘ভোট ডাকাতি হয়নি, ভোট চুরি হয়েছে’।গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পৌনে এক লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী। গোলযোগহীন ও শান্তিপূর্ণ এই নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছে পর্যবেক্ষকরা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নির্বাচনকে তাদের ভোটের অধিকারের লড়াইয়ের ‘আংশিক বিজয়’ বললেও গয়েশ্বর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ভোট ‘ফেয়ার’ হলেও ফল ‘আনফেয়ার’ হয়েছে।আলোচনা সভায় তিনি একই প্রসঙ্গে বলেন, এবার নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়নি। দিনের আলোতে যা হয়েছে, তা হল সুন্দর। রাতের অন্ধকারে যা ঘটেছে, তা অজ্ঞাত।এসব কারণে মনে হয়, ভোট ডাকাতি হয়নি, ভোট চুরি হয়েছে। আমি আগেই বলেছি, দৃশ্যত ইলেকশন ইজ ফেয়ার, বাট রেজাল্ট ইজ আনফেয়ার। কারণ এই নির্বাচনের ফলাফলের যে ব্যবধান, তা বিশ্বাসযোগ্য না।ফল ঘোষণাস্থল নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের বিভিন্ন কক্ষে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অবস্থান নিয়েছিল বলে দাবি করেন গয়েশ্বর। ভোটের আগের রাতে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে কিছু বলা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেছেন, আমি চুরিতে বিশ্বাস করি, আমি ডাকাতিতে বিশ্বাস করি না।তবে এই কথাটি নিজের কানে শোনেননি এই বিএনপি নেতা।আমি নিজের কানে শুনিনি। যে দুই-একজন সাংবাদিক ক্লাবে ছিল, তাদের কাছে প্রকাশ করেছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা, তাদের থেকে শোনা উদ্ধৃতি দিয়ে আপনাদেরকে বলছি।

নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটের হার বিশ্লেষণ করে গয়েশ্বর বলেন, সেখানে ৩৯% থেকে শুরু করে ৭৩% পর্যন্ত ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কেন্দ্রে সকাল ৯টার আগে ভোটার আসেনি, ধীরে ধীরে বেড়েছে। বিকাল ২/৩ টার পর ভোট কেন্দ্রগুলো খালি।

আপনারা বলেন, যেখানে ৩৯% ভোট কাস্ট হয়েছে, সেখানে বাকি ভোটাররা কলেরায় মারা গেছে? আর যেখানে ৮৩% ভোট কাস্ট হল, কীভাবে হল, কোত্থেকে আসল? একটি কেন্দ্রে ৬০% উপরে যদি ভোটের হার হয়, তবে সেই কেন্দ্রে ভোট ৮টায় শুরু হলে বিকাল ৪টায় মধ্যেও সকল ভোট দেওয়া সম্ভব হয় না।

নারায়ণগঞ্জের ভোটের ফল আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কাউন্সিলর আমার বেশি পেয়েছি। তাদের ভোটের সাথে দলের মেয়র প্রার্থীর ভোটের ব্যবধানটা বেশি। এই হিসাবটা আমাদের দেখতে হবে।প্রত্যেকটা কেন্দ্রের ফলাফল, পোলিং এজেন্ট, প্রার্থীর সবার সাথে কথা বলিছি, আমরা যাচাই-বাছাই করছি। ভয়েস অব ডেমোক্রেসি’র উদ্যোগে ‘শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকার: প্রেক্ষিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গয়েশ্বর।সংগঠনের ফেলো জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মাহফুজ কবিরের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ট্যাক্সসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্বাস উদ্দিনও বক্তব্য রাখেন।