বুধবার জেলা পরিষদ নির্বাচন।দেশে এই প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।ইতোমধ্যে ব্যালট পেপার, ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালির কলমসহ নির্বাচনী সামগ্রী জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশন চায় নির্দলীয় এই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দশনা দেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে কমিশন চিঠি পাঠিয়েছে।তিনি বলেন, যেসব সংসদ সদস্য এখনও এলাকায় অবস্থান করছেন তাদের এলাকা থেকে সরে আসার জন্য কমিশন থেকে স্পিকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

মো. শাহনেওয়াজ বলেন, যেসব সংসদ সদস্য এলাকায় আছেন স্পিকার যেন তাদের নির্দেশ দেন এলাকা ছেড়ে চলে আসার জন্য। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা যেন এলাকা থেকে সরে আসেন। সংসদ সদস্যরা সম্মানী ব্যক্তি এবং আত্মসম্মানী লোক। আশা করি, তারা গুরুত্ব বুঝে এলাকা থেকে চলে আসবেন।

নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা মূলত কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করব। যেহেতু এখানে জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন তাই আমরা কেন্দ্রের বাইরের চেয়ে ভেতরের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যে চলে গেছেন। ভোটের দিন আরো যাবেন।তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১ জেলায় বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলায় স্থাপিত ভোট কেন্দ্রে দেশের প্রথম জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট দেবেন ভোটাররা।২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদপূর্তিতে এবারই প্রথম জেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন ভোটের মাধ্যমে। জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি কর্পোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা,পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।

ইতোমধ্যে ২২টি জেলায় একক প্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদে ২২জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এখন চেয়ারম্যান পদে ৪১জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৫ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। সাধারণ সদস্য ১৩৯ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।এ হিসাবে স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশের প্রায় ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। একইভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। ৩২০টি পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি কর্পোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫শ’ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন, যারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এদিকে,আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।মঙ্গলবার দুপুরে শেরে-বাংলা নগরস্থ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।তিনি বলেন, যে সংসদ সদস্যরা এখনও এলাকায় রয়েছেন তাদের সরে আসার জন্য ইসি থেকে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ সদস্যরা যেন এলাকা ছাড়েন, তিনি এ বিষয়ে নির্দেশ দিবেন। আশা করি, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত করবেন।শাহনেওয়াজ আরও বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি, অনেক সংসদ এখনো সদস্য এলাকায় অবস্থান করছেন। এমনকি তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করছেন। আইন প্রণয়নকারী সংস্থা অর্থাৎ পার্লামেন্টের মেম্বার হয়ে তারা বেআইনি কাজ করবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না।

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবো।নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে এ কমিশনার বলেন, মূলত কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেওয়ার কারণে ভেতরের নিরাপত্তাই বেশি জোরদার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে চলে গেছেন। ভোটের দিন নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে।