শ্রমিক অসন্তোষের মুখে সাভারের আশুলিয়ার ৫৫টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করলেন মালিকেরা। তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মঙ্গলবার এ কথা জানান।রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক মালিকদের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে কারখানা বন্ধ থাকার সময় বেতন পাবেন না শ্রমিকেরা।নূন্যতম মজুরি বাড়ানো, বার্ষিক ছুটির বিপরীতে এবং চাকরির বয়স পাঁচ বছর হলে বছরে একটি করে মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন তৈরি পোশাকশ্রমিকেরা।

শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে বাধ্য হয়ে সাভারের আশুলিয়ায় ৫৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আজকে থেকে এসব কারখানায় শ্রমিকরা যতদিন কাজে যোগ দেবে না ততদিনের বেতন তারা পাবে না। শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন কারখানার মালিকরা।সিদ্দিকুর অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে বার বার সমঝোতার প্রতিশ্র“তি দিয়েও শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।এর আগে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন।বেতন বৃদ্ধি, ঘরভাড়া না বাড়ানো, ‘কথায় কথায়’ ছাঁটাই না করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বেরন, বাইপাইল, নরসিংহপুরসহ আশপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা গত আট দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার রাতে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বাসায় ৪২টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে কারওয়ান বাজারের সাংবাদিকদের বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বৈঠকে আন্দোলন প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও মঙ্গলবার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি।তারা কার্ড পাঞ্চ করে চলে গেছে। তাই কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তারা বেতন পাবে না।শ্রমিকদের দাবিকে অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে কি না তা খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপাতি।তিনি বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর পর বেতন বাড়ানো হয়। এখন মাত্র তিন বছর পার হয়েছে। আর দুই বছর পর বেতন বাড়ানো সময় হবে।এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার হারানোর শংকা প্রকাশ করে সিদ্দিকুর বলেন, ভারত অনেক বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে, আমাদের বাজার তারা নিয়ে যাচ্ছে। তারা ঘোষণা দিয়েই নেমেছে।এমনিতেই আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা বাজার হারাব।