জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যেকোনো ওষুধ তৈরি ও বিক্রয় করতে হলে নিবন্ধন করতে হবে, ওষুধ আমদানি করতে হলে নিবন্ধন করতে হবে, জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব খসড়ায় করা হয়েছে। এর লক্ষ্যে হলো নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বিপণন রোধ করা।
খসড়ায় বলা হয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আইনে শাস্তি নির্ধারণ করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। জনস্বার্থে দাম নির্ধারণ করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কেউ বেশি দাম নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিশ্বের ১২২টি বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করে। বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সদন ও স্বীকৃতি লাভ করেছে বাংলাদেশের ওষুধ। তিনি বলেন, প্রায় ১১ বছর পর আন্তর্জাতিক চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে নীতিমালাটি যুগোপযোগী করা হয়েছে।ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ এবং ওষুধ তৈরি, বিক্রি ও আমদানিতে আরও বেশি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুযোগ তৈরি করে জাতীয় ঔষুধ নীতি অনুমোদন করেছে সরকার।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, এই কর্তৃপক্ষের নাম হবে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ ওষুধের মান থেকে শুরু করে কাঁচামাল ও অন্যান্য সরঞ্জামের মান দেখবে।বর্তমানে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং ঔষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর এসব বিষয় দেখভাল করে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ১২২টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ যাচ্ছে। ফলে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
২০০৫ সালে সর্বশেষ জাতীয় ওষুধ নীতি করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে অনেক কিছুর পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে এই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।নতুন ঔষুধ নীতির আওতায় বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা সংশোধন করা হবে। কার্যকর, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন’ ওষুধের সহজলভ্যতা এবং ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব ওষুধ নিবন্ধন করতে হবে।এছাড়া নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত, বিক্রি ও বিতরণ রোধসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নীতিতে বিস্তারিত বলা রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।তিনি বলেন, ওষুধ নির্বাচন, পরিমাণ নির্ধারণ, ঔষুধ সংগ্রহ, মুজদ ও বিতরণ; ওষুধের বিজ্ঞাপন ও প্রচার নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছ ও যৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ, দেশে নতুন প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান স্থানান্তর, ওষুধ গবেষণা উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়েও নীতিতে বলা হয়েছে।
সরকার জনস্বার্থ বিবেচনা করে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা নিয়মিত হালনাগাদ করবে জানিয়ে শফিউল বলেন, প্রতি বছর অন্তত একবার ওষুধের মূল্য তালিকা হালনাগাদ করে জনগণের অবগতির জন্য সব ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে খুচরা মূল্য প্রকাশ করা হবে। কেউ ওষুধের অতিরিক্ত দাম নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সামরিক শাসনামলে ১৯৭৭ সালে প্রণীত কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অর্ডিনেন্স সংশোধন করে নতুন করে বাংলায় আইন করার একটি প্রস্তাবেও এদিন নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শফিউল আলম বলেন, মূলত আগের আইনই যথাসম্ভব রাখা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে একটু সংশোধন করা হয়েছে। আগের আইনে যে শাস্তির বিধান ছিল সেখানে অর্থদন্ডের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ গঠন এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (এনএসডিএ) নামে নতুন একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।বৈঠকে অর্থ বিভাগের অধীনে ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে এনএসডিএ নামে ‘লিগ্যাল অথরিটি’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, নতুন ওই কর্তৃপক্ষ গঠন করতে একটি আইন করা হবে। আর স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য করা হচ্ছে জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল।তহবিলের আকার কেমন হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি প্রকল্প থেকে শুরুর দিকে অর্থায়ন করা হবে।পরে আরও ডেভেলপ করা হবে। এখানে অনেক রকমের সোর্স আসার সুযোগ আছে।মন্ত্রিসভার অনুমোদনের মধ্য দিয়ে জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হল জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, অথরিটির জন্য আইনের খসড়াও তৈরি হয়ে গেছে। সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস আইন, নজরুল ইনস্টিটিউট আইন এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো বাতিলে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকায় নতুন করে তৈরি নজরুল ইসস্টিটিউট আইন ২০১৬ ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৬ এর খসড়ারও নীতিগত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।