কেউ নব্বই পেরিয়েছেন, কেউ আশিতে পা দিয়েছেন, আবার কেউ মৃত্যুরকুলে ঢলিয়ে পড়েছেন। অসহায় এই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষগুলোর সন্তানাদি থেকেও যেন নেই! কারণ তারা কেউ খোঁজখবর রাখেন না বৃদ্ধ বাবা কিংবা মায়ের। ঠিকমতো খাবার জোটে না বলে ভিক্ষাবৃত্তি করেন তারা। তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের আর্থিক সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও জুটেছে সরকারের বয়স্ক ভাতার কার্ড। শুধু জোটেনি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিন জন হতভাগ্যের।

আছিয়া খাতুন: দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামে বাড়ি আছিয়া খাতুনের বয়স ৮০ বছর। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই বৃদ্ধা লাঠিতে ভর দিয়েই ভিক্ষাবৃত্তি করেন। দেখা হয় পার্শ্ববর্তী বারঘড়িয়া গ্রামে। নিজের কষ্টের কথা তুলে ধরে এই প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী মফিজ উদ্দিন প্রায় ৮ বছর আগে মারা গেছেন। ৩ ছেলের কেউই তার খোঁজখবর রাখেন না। একমাত্র মেয়ে মাঝে মধ্যে খবর নিত। কিন্তু বর্তমানে সে প্যারালাইসড। বৃদ্ধ আছিয়া বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মুই (আমি) হাটপার (হাঁটতে) পাও না, কিন্তু পেটের জ্বালা সইবার না পারি ভিক্ষা করোং (করি)। তিনি বলেন, মেম্বার-চেয়ারম্যানকে অনেক কইছি। কিন্তু তারা তো কেউ মোক একান বয়স্ক ভাতার কার্ড করি দেইল (দিল) না।’

জাহেদা বেওয়া: মহিষখোচা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের বাড়ির পাশে স্পার সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি জাহেদা বেওয়ার। স্বামী হাছত আলী মারা গেছেন অনেক আগে। ৪ ছেলেমেয়ের কেউ খোঁজখবর রাখেন না ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মায়ের।তাই তার জায়গা হয়েছে রাস্তার ধারে একটি ছনের ছাউনি ঘরে। তিনিও ভিক্ষার জন্য ছুটে এসেছিলেন তিস্তা নদী পেরিয়ে চরগোবর্দ্ধন গ্রামে। সেখানেই কথা হলে তিনি জানান, তিস্তা নদী হামার সউগ (সবকিছু) নিয়ে গেছে। বাবা- মোর শরীর চলে না, শেষ বয়সেও কি মোর ভাগ্যে বয়স্ক ভাতার কার্ড জুটবে না?

মফিজ উদ্দিন: আদিতমারী তিস্তাপারের সলেডি স্পার-২ বাঁধ সংলগ্ন গ্রামে বাড়ি মফিজ উদ্দিনের। বয়স ৯০ বছর। ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। কিন্তু তারা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজখবর না নেয়ায় স্ত্রী জমিলা খাতুনকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছেন তিনি। তাই তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমার ভাগ্যে আজও বয়স্ক ভাতার কার্ড জোটেনি।’তাদের ব্যাপারে মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা তাদের ৩ জনের বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে পারত। এরপরও বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন তিনি।

মোঃ ইউনুস আলী, লালমনিরহাট প্রতিনিধি