পোশাক কারখানা স্থানান্তর করা নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে রাস্তা আটকে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কে সোমবার সকালের ওই ঘটনায় কেউ আহত হননি বলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদ জানিয়েছেন।তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন, সকাল ১১টার দিকে ওই কারখানার সোনিয়া নামের এক কর্মী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন।এছাড়া মিরপুরের ওই সড়কের একটি ভবনের নিরাপত্তকর্মী মাহফুজও (৩০) হাসপাতালে আসেন বলে তিনি জানান।তারা দুজনই সামান্য আহত হয়েছেন বলে এসআই বাচ্চু মিয়ার ভাষ্য।
সোমবার সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ থেকে সাতজন শ্রমিক আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়ক বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা।বিক্ষোভরত একাধিক শ্রমিকের ভাষ্য, তাঁরা মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কের রেজাউল অ্যাপারেলস কারখানায় কাজ করছেন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কারখানাটি গাজীপুরে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন মালিক।শ্রমিকদের ভাষ্য, কারখানা গাজীপুরে স্থানান্তর করা হলে অনেক শ্রমিকই সেখানে যাবেন না। তাই নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকেরা বেতন-ভাতার বিষয়ে কিছু দাবি জানিয়েছেন।
মোখলেছুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, তাঁরা তিন মাসের বেতন, একটি বোনাস, একটি বেসিকের সমান টাকা ও এক বছরের ছুটির (১৬ কর্মদিবস) টাকা দাবি করেছেন। দাবির বিষয়ে গতকাল রোববার রাত নয়টা পর্যন্ত মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠক হয়। বৈঠকে বিজিএমইএ ও পুলিশের প্রতিনিধি ছিল। বৈঠক শেষ মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দুই মাসের বেতনসহ অন্যান্য দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানায়। পরে শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে যান।সাইফুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, আজ সকালে তাঁরা কারখানায় আসেন। কারখানার মূল ফটকে তালা লাগানো দেখতে পান। সেখানে পুলিশি পাহারা দেখা যায়। বিনা নোটিশ হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকেরা মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের মিরপুর বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার এফ. এম ফয়সাল বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আজকের মধ্যে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে।ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রেজাউল অ্যাপারেলস নামের কারখানাটি আগামী বছরের প্রথম দিকে গাজীপুরে স্থানান্তর করা হবে। এজন্য মালিকপক্ষ মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিল। গাজীপুরে যেসব শ্রমিক যাবে না, তারা বেতনভাতা পরিশোধের দাবিয়ে জানিয়ে আসছিলেন।
হাসপাতালে ওই কারখানার শ্রমিক সোনিয়া সাংবাদিকদের জানান, সকালে কারখানায় এসে মূল ফটকের তালা এবং আশপাশে পুলিশ দেখে তারা রাস্তায় নামেন।শ্রমিকরা জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে।তিনি বলেন, কারখানা স্থানান্তর করলে সব শ্রমিক তো আর গাজীপুরে যেতে পারবে না। যারা যাবে না সেসব শ্রমিকদের বেতন বকেয়াসহ পরিশোধ করতে হবে।পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদের ভাষ্য, শ্রমিকরা স্কুলপড়ুয়া শিশুদেরও চলাচলে বাধা দেওয়ায় পুলিশ ফোর্স’ করতে বাধ্য হয়েছে।পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করেছে। তবে কেউ আহত হয়নি।