03-12-16-pm_press-conference-18সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি সফরকে ফলপ্রসূ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শনিবার বিকেলে গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পরে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিপত্তির মুখে পড়েছিল। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি, আমার সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গতির সঞ্চার করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।’

প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি ও মরক্কো সফরের ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে অবগত করার উদ্দেশ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট জ্যানোস এডের-এর আমন্ত্রণে বুদাপেস্ট পানি সম্মেলন ২০১৬-তে যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হাঙ্গেরি সফর করেন। এর আগে, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন ‘কপ-২২’-এর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর মরক্কো সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পানি সম্মেলন ২০১৬-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি নীতিমালা ও কার্যকারিতায় পানি ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়ে পানি ব্যবস্থাপনার জন্য সার্বিক বৈশ্বিক উদ্যোগ কামনা করেন।

তিনি বলেন, ‘পানি সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্যসমূহ বোঝার জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি স্থানান্তর কাজে সহায়তার লক্ষ্যে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের প্রস্তাবসহ আমি সাত দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, স্যান্ডর প্যালেসে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের নেতিবাচক প্রভাব এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুর মতো জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’ তিনি বলেন, পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং নদ-নদীর দূষণ রোধে সহযোগিতা বিনিময়ের মতো ইস্যুগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুদাপেস্ট পানি সম্মেলন আয়োজনের জন্য তিনি হাঙ্গেরির সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং জ্যানোস এডেরকে তাঁর সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, হাঙ্গেরি সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি হাঙ্গেরির স্বাধীনতা ও ঐক্য সমুন্নত রাখতে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন সেই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুদাপেস্টের হিরোস স্কয়ারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সে দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা একই স্থানে একান্ত বৈঠক করি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ের পাশাপাশি তারা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রকৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশী একশ’ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়াও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কৃষিসহ নতুন ক্ষেত্রে কাজ করতেও সম্মত হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং তিনি সুবিধাজনক সময়ে এদেশ সফরে আসবেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এমওইউ, দু’দেশের সরকারের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত এমওইউ এবং দু’দেশের কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক এমওইউ। শেখ হাসিনা বলেন, পরে তারা গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী এফবিসিসিআই ও হাঙ্গেরি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত বাংলাদেশ হাঙ্গেরি বিজনেস ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতায় বর্তমান সরকারের আমলে গৃহীত অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, তিনি বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডে হাঙ্গেরির ব্যবসায়ীদের শরীক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তাঁর বক্তৃতায় ভূ-অর্থনৈতিক কৌশলগত স্থানে থাকা বাংলাদেশে বাাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরেন এবং হাঙ্গেরির ব্যবসায়ীদের প্রতি এখানে বিদ্যমান বাণিজ্য-বিনিয়োগ সুবিধা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। অতঃপর আমাদের উপস্থিতিতে দুই ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। মরক্কোর মারাকাশে অনুষ্ঠিত ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসি) সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন (কপ-২২) বিষয়ে কথা বলার সময় শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান ও দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি হ্রাসে অভিযোজনের জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়েও তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন।’ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিক সম্মেলন মডারেট করেন।