20161204_123148

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নানকে জয়দেবপুর থানার চাঁদাবাজী ও মারধরের একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল হাই রবিবার শুনানী শেষে ওই আদেশ দেন।

গাজীপুরের কোর্ট ইন্সপেক্টর মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবীতে জয়দেবপুর থানা এলাকায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কার্যালয়ে টঙ্গীর শিলমন এলাকার মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে মোঃ রমিজ উদ্দিনকে মারধরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অধ্যাপক এম এ মান্নানকে রবিবার গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-৩ এ হাজির করে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানী শেষে বিকেলে অধ্যাপক মান্নানের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং তা দুই দিনের মধ্যে কার্যকরের আদেশ দেন ওই আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল হাই। দুই দিনের মধ্যে রিমান্ড কার্যকর করা না হলে রিমান্ড বাতিল হবে বলে আদালত আদেশে উল্লেখ করেন। বর্তমানে অধ্যাপক এমএ মান্নান গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ রয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গীর শিলমন এলাকার মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে মামলার বাদি মোঃ রজিম উদ্দিন টঙ্গী শিল্প এলাকায় তার নিজ জমিতে কারখানা করার জন্য সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে অনাপত্তি সনদের জন্য যোগাযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাদি তার কাগজপত্রসহ মেয়রের কার্যালয়ে যান। এসময় মেয়রের অফিস কক্ষের সাথে থাকা একটি রুমে নিয়ে মেয়র মান্নান তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তাকে কারখানা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে অধ্যাপক এমএ মান্নানের হুকুমে ও নির্দেশে অপরাপর আসামি মেয়রের এপিএস মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ রইচ উদ্দিন, আরিফ হাওলাদার, মোঃ সালাউদ্দিন, মোঃ আমিনুল ইসলাম লিটু ও মোঃ কাওসারসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জন তাকে এলোপাথারী মারধর করে। এক পর্যায়ে তিনি ডাক চিৎকার করলে অধ্যাপক মান্নান তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় অন্যান্য আসামিরা তার কাছ থেকে নগদ ৫৫ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। আর চাঁদা না দিলে তাকে হত্যা করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিবে বলে হুমকি দেয়। এঘটনায় রমিজ উদ্দিন বাদী হয়ে গত ২৪ নবেম্বর রাতে জয়দেবপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

অধ্যাপক এম এ মান্নানের প্রধান আইনজীবী মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, অধ্যাপক এম এ মান্নানকে এ পর্যন্ত মোট ২৮টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ২৭ মামলায় জামিন লাভ করেন। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় দায়ের করা নাশকতার একটি মামলায় গত ২৩ নবেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভের পর ২৫ নবেম্বর আরো একটি মামলায় তাকে ‘শোন এ্যারেষ্ট’ দেখানো হয়। বর্তমানে অধ্যাপক এমএ মান্নান গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ রয়েছেন। তিনি বিএনপির সদ্য ঘোষিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গাজীপুরে যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোট ২২টি মামলায় ১৩ মাস কারাবরণের পর গত ২ মার্চ অধ্যাপক এমএ মান্নান জামিনে কারামুক্ত হন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে কয়েক সহযোগিসহ অধ্যাপক এমএ মান্নানকে আবারো গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন গাজীপুরের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। ইতোপূর্বে তিনি আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৭টি মামলার সবক’টিতে জামিন লাভ করেন। এসব মামলার প্রায় সবগুলোই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালকালে গাড়ী ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, হত্যা, নাশকতা, বিস্ফোরক ও পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দানসহ বিভিন্ন আইনে দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’টি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত নাশকতার মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় গত বছরের ১৯ আগস্ট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। তার অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।