%e0%a7%a7%e0%a7%ad%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%8f%e0%a6%b6%e0%a7%80%e0%a7%9f-%e0%a6%9a%e0%a6%beসংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত চারুকলা বিষয়ক সর্ববৃহৎ প্রদর্শনী হলো ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে এ অনন্য প্রদর্শনী ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১ ডিসেম্বর ২০১৬ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় আয়োজন করা হয়েছে মাসব্যাপী ‘১৭তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৬’। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৫ টি দেশ এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে।

গতকাল১ ডিসেম্বর ২০১৬ বেলা ১১ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত,এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ১৭তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ ২০১৬ এর সাংগঠনিক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জনাব লিয়াকত আলী লাকী, বিচারক মন্ডলীর সভাপতির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন শিল্পী রফিকুন নবী, মাননীয় প্রধান অতিথি কর্তৃক বিজয়ী শিল্পীদের পুরস্কার বিতরণ, অতিথিবৃন্দকে ১৭তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ ২০১৬ ক্রেস্ট প্রদান, উত্তর কোরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার মি. ও ইয়ং চোল এবং থাইল্যান্ডের ভাইস মিনিস্টার মিস. চাওরো কাসিতসুন অরং ট্রং এর বক্তব্য এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব আক্তারী মমতাজ এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর, এমপি। এছাড়াও মাননীয় প্রধান অতিথি কর্তৃক স্মারক ডাক টিকিট উন্মুক্তকরণ ও বিজয়ী শিল্পীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানসূচি, বাংলাদেশী ও বিদেশী শিল্পী, পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের তালিকা এবং সেমিনার ও গ্যালারির স্থিরচিত্র সংযুক্ত। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৫৫৬ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম থেকে বাছাই করে ১৪৮ জন শিল্পীর ১৫৪ টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ৫৪জন আমন্ত্রিত চিত্রশিল্পীর ৫৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৫৪টি দেশের ১২৭ জন শিল্পীর ২৭৭টি শিল্পকর্ম। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো থেকে শিল্পী, শিল্প সমালোচক, মিউজিয়াম কিউরেটরসহ মোট ১৪৬ জন বিদেশী এ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে।

প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশগুলো হলো; আর্জেন্টিনা, অষ্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কলোম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, উত্তর কোরিয়া, মিশর, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মািন, গ্রীস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কুয়েত, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালোয়শিয়া, মরিশাস, মায়ানমার, নেপাল, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, পেরু, ফিলিপাইনস, পোল্যান্ড, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রিইউনিয়ন আইল্যান্ডস, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সাউথ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্কো, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভিয়েতনাম এবং উজবেকিস্তান।

মাসব্যাপী প্রদর্শনীর পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে সেমিনার, পারফরমেন্স আর্টস প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মাসব্যাপী প্রদর্শনী উপলক্ষে অৎঃ ধহফ ঃযব ঈরঃু বিষয়বস্তুু শীর্ষক ২ ও ৩ ডিসেম্বর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। আজ ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার “ ঞযব ঈরঃু রহ ইধহমষধফবংযর অৎঃ” মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠিতব্য সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন স্থপতি সামসুল ওয়ারেস ও শিল্পী মোস্তফা জামান মিঠু। (আজকের সেমিনারের মূল বক্তব্য সংযুক্ত) আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর সেমিনার ২টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে প্রথম অংশ সকাল ১০টা থেকে ১১.৩০টা এবং দ্বিতীয় অংশ দুপুর ১২টা থেকে ১.৩০টা। শিল্পসমালোচক জিয়াউল করিম এর সভাপতিত্বে প্রথম অংশের আলোচনায় আলোচনা করবেন পোল্যান্ডের তুমসঁহঃ জধভধষ ঝঃৎবহঃ এবং কাতারের উৎ. ঘধফরৎধ.

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোনে আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পের আর্টক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিল্পীবৃন্দ হলেন বাংলাদেশের শিল্পী ড. ফরিদা জামান, হাশেম খান, মাহমুদুল হক, মুনিরুল ইসলাম, নাইমা হক, নাজলি লাইলা মনসুর, রফিকুন নবী, রোকেয়া সুলতানা ও সমরজিৎ রায় চৌধুরী এবং চায়না, ইন্ডিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলংকার শিল্পীবৃন্দ।

প্রদর্শনীর পাশাপাশি ১৭তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শিত হবে। বাংলাদেশের ১২জন শিল্পী এ পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শন করবেন। এছাড়া বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।প্রদর্শনী উপলক্ষে বিশিষ্ট চারুশিল্পী, শিল্পসমালোচক ও প্রতিনিধি এবং জুরি কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দের জন্য প্রদর্শনীস্থলে নিচতলায় তথ্যকেন্দ্র এবং শিল্পী ও বিশিষ্টজনদের ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য চারুকলা ভবনের ছাদে সুসজ্জ্বিত একটি মিডিয়া কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য চারুকলা ভবনের নিচতলায় ফুডকোর্ড এবং হস্তশিল্প ও কারুপণ্য মেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রদর্শনীকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের কদম ফোয়ারা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান আকর্ষনীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম নির্বাচনের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট এক নির্বাচকমন্ডলী গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক শিল্পী ড. ফরিদা জামান এবং অন্যান্য সদস্যরা হলেন; শিল্পী কালিদাস কর্মকার, প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস, শিল্পী নিসার হোসেন, স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ, শিল্পী মোহাম্মদ ইকবাল ও জাপানের শিল্পী তয়োমি হোসিনা।

এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পকর্মের মধ্যে থেকে প্রতিবছরের মতো এবারও ৯ জন শিল্পীকে পুরস্কার দেয়া হবে। এরমধ্যে পাঁচ লাখ টাকা মুল্যের ৩ টি গ্রান্ড পুরস্কার এবং ৩ লাখ টাকা মূল্যের ৬ টি সম্মাননাসূচক পুরস্কার। পুরস্কারের জন্য শিল্পকর্ম নির্বাচন করেন পাঁচসদস্যের এক জুরি বোর্ড। বাংলাদেশ, পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানের শিল্পীদের নিয়ে এ জুরিবোর্ড গঠন করা হয়েছে।

এশীয় প্রশান্তমহাসাগরীয় ও অন্যান্য দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে থেকে চিনের ওয়াং চুনচেন, ফ্রান্সের মিস মায়েলো ডাউণ্ট, ইন্দোনেশিার মিস দোলোরোসা সিংহা, জাপানের মিস ইয়োকো হাসেগাওয়া, পোল্যান্ডের জাইমুন্ট রাফাল ষ্ট্রিরেন্ট এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ইউন জিনসুপ এ প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিশিষ্ট চারুশিল্পী, শিল্পসমালোচক ও প্রতিনিধি এবং জুরি কমিটির সম্মানিত সদস্যরা জাতীয় সংসদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এছাড়াও তাদের জন্য নৌ বিহারের ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সহ¯্রাব্দপ্রাচীন। আমরা আমাদের আবহমান এ সংস্কৃতিকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। দ্বিবার্ষিক এ চারুকলা প্রদর্শনী একটি আন্তর্জাতিক কার্যক্রম এবং চারুকলা বিষয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আয়োজন। চারুকলা বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য আয়োজনের মধ্যেও এটি অন্যতম। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে তাদের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা সম্যক ধারণা পেয়ে থাকি, যা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের শিল্পীগণ আমাদের সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং তা স্ব স্ব দেশের জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারে। এর ফলে আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠে এক নিবিড় সাংস্কৃতিক যোগাযোগ, যা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কন্নোয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা মনে করি, এ আয়োজনের মাধ্যমে একটি সংস্কৃতিমনা জাতি হিসেবে আমাদেরকে বিশ্বসভায় তুলে ধরতে পারবো এবং এর ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।