%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%b2-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%95

বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের বাকি চার পঞ্চমাংশ ফেরত দেবে না জানিয়ে আলোচিত ওই ঘটনার জন্য উল্টো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়ী করেছে ফিলিপিন্সের রিজল কর্মশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন- আরসিবিসি। দেশটির ইংরেজি দৈনিক ইনকোয়ারার জানিয়েছে, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে রিজল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো দায় নেই।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অংশের বাকি সাড়ে ছয় কোটি ডলার উদ্ধারে এখন ফিলিপাইনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। দলটি রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করবে বলে জানা গেছে। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল হয়ে গেছে। দেশটির আইনমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, সিনেটের চেয়ারম্যান, গভর্নরের সঙ্গে অবশ্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের মুখপাত্র আর্নেস্তো অ্যাবেলা সোমবার বৈঠক বাতিলের তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ওপর তাৎক্ষণিকভাবেই মনোযোগ দেওয়ার চাপ থাকতে পারে বলে তা বাতিল করা হয়েছে।এদিকে ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ ফিলিপাইনের দৈনিক ইনকোয়ারার-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নিশ্চয়ই আমরা রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন কাছে অর্থ দাবি করব। সিনেটের কিছু সভায় তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিল, দোষ প্রমাণ হলে বাংলাদেশকে পাঁচ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অংশের দেড় কোটি ডলার নগদ ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইন। তবে বাকি ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার উদ্ধারে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ফিলিপাইন পাঠিয়েছে। ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ফিলিপাইন সরকারের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে।আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আছেন অর্থ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান।জানা গেছে, রিজার্ভের চুরি হওয়া অংশের আরও ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার (৩৭১ কোটি টাকা) উদ্ধারের আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব অর্থ ফিলিপাইনের কয়েকটি ক্যাসিনো থেকে জব্দ করা হয়েছিল, যা নিয়ে বর্তমানে দেশটিতে মামলা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানও সম্প্রতি এসব কথা জানিয়েছেন। মূলত এ অর্থ আদায়ের লক্ষ্যেই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি ফিলিপাইনে রয়েছে।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় ও বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে যায়। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত পাওয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অংশের ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফিলিপাইন থেকে ফেরত পাওয়ায় বাকি থাকল আরও ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

গত ফেব্র“য়ারিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে চুরি করা প্রায় দশ কোটি ডলারের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকের একটি শাখা হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়। তার মধ্েয এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরত পাওয়ার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির যখন ফিলিপিন্স সফরে রয়েছেন, ঠিক তখনই রিজলের ওই বিবৃতি এল।রিজলের আইনজীবী থিয়া দায়েব ওই বিবৃতিতে বলেছেন, “ওই চুরির কারণ আরসিবিসি নয়। আমাদের বিরুদ্ধে তাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) কোনো যুক্তি নেই। অবহেলা যদি কারও থেকে থাকে, তবে তা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে ফিলিপিন্স সরকারের কাছে স্পষ্ট হতে বলব; তাদের সহযোগিতায় সরকার অনেক করেছে। কারা ওই চুরি করেছে তা বাংলাদেশ ব্যাংককেই বের করতে হবে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর থেকেই সহযোগিতা পেয়েছে- বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন আসার কথা উল্লেখ করে রিজলের আইনজীবী দাবি করেন, সুইফট, নিউ ইয়র্ক ফেড ও তিনটি গ্লোবাল ব্যাংকের সুরক্ষিত তিন স্তর পেরিয়ে ওই অর্থ রিজলে পৌঁছায় এবং সেখানে রিজলের আর কোনো ভূমিকা ছিল না।ম্যানিলায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বাকি অর্থ আদায়ের জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ‘অন্যায্যভাবে’ ফিলিপিন্স সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন বলেও আরসিবিসির অভিযোগ।জন গোমেজ এর আগে ফিলিপিন্সের সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরি নিয়ে গতবছর এপ্রিলে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির শুনানির সময় আরসিবিসির সাবেক প্রেসিডেন্টে লরেঞ্জো তান ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ব্যাংকটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ কোটি ডলার পরিশোধ করবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে।

সিএনএন ফিলিপিন্স জানিয়েছে, ম্যানিলা সফররত আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন। এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, রিজল ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। নিজেদের দায়ও তারা স্বীকার করেছে। এখনও ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার বাকি, আর আমরা সেই অর্থ উদ্ধার করতেই এখানে এসেছি,” বলেন আনিসুল।তিনি বলেন, ফিলিপিন্সের সিনেট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে প্রমাণ হয়েছে যে, আরসিবিসির ভূমিকায় বড় ধরনের সমস্যা ছিল। হ্যাকাররা যাতে তাদের চুরির অর্থ জুপিটার শাখার ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে বের করে নিয়ে যেতে পারে, সেই সুযোগ আরসিবিসিই দিয়েছে।সিনেট কমিটিতে দেওয়া লরেঞ্জো তানের প্রতিশ্র“তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে আনিসুল হক বলেন, সেই প্রতিশ্যুতি অনুযায়ী আরসিবিসির উচিৎ বাংলাদেশের টাকা দিয়ে দেওয়া।

আরসিবিসির বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করার সুযোগ ওই ব্যাংকের নেই। রিজার্ভ চুরি নিয়ে বাংলাদেশে যে তদন্ত চলছে, তার অগ্রগতি সম্পর্কেও কোনো তথ্য তিনি দেননি।সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।

অন্যদিকে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে সরিয়ে নেওয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। এর একটি বড় অংশ ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়।বিশ্বজুড়ে তোলপাড় করা এই ঘটনাটি তদন্তের উদ্েযাগ নেয় ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটি। সে দেশের আদালতেও গড়ায় বিষয়টি। এর মধ্যে ক্যাসিনো মালিক কিম অংয়ের ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়ার আদেশ ফিলিপিন্সের আদালত। খোয়া যাওয়ার নয় মাসেরও বেশি সময় পর চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।