tofael_87256

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন,বর্তমান মার্কিন সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছিল। তিনি আশা করেন, জিএসপি পুনর্বহালের জন্য নবনির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকবে না।তিনি বলেন, জিএসপি পুনর্বহালের জন্য ১৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ তা পূরণ করেছে। আমাদের জিএসপি ফেরত না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।রোববার সচিবালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিয়োগ সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি-টিকফার বৈঠক আগামী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত টিকফার দ্বিতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরে ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। আজকের বৈঠকটি এ বিষয়ে হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আমরা যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানায় যাই, শ্রমিকেরা বলেন, আমরা ভালো আছি। আমার কাছে শ্রম অধিকারের বিষয়টি একটি অস্পষ্ট বিষয় বলে মনে হয়। তবে অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স আমাদের কারখানার কর্মপরিবেশ ভালো বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে।রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের কোনো কোনো নেত্রীও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজারসুবিধা-জিএসপির বিরোধিতা করেছিল বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জিএসপি থেকে আমরা যে খুব বেশি লাভবান হই তা নয়, এটা দেশের একটি সম্মান। জিএসপি না থাকা সত্ত্বেও গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছি।তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রে আগামীতে নতুন যে সরকার গঠন হচ্ছে, সেই সরকারের এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না বলে আশা করি। কারণ, অতীতে যখন জিএসপি বাতিল করা হয়েছিল তখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের দেশেরও কোনো কোনো নেতা-নেত্রী জিএসপি বাতিল চেয়েছিলেন।তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা বাতিল করা হয়েছিল এটা ঠিক নয়। কী কারণে বাতিল করা হয়েছিল, কী সমস্যা রয়েছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী মাসে নির্ধারিত টিকফা বৈঠকটি হচ্ছে না। আগামী মার্চ বা এপ্রিলে এ বৈঠক হতে পারে। টিকফার বৈঠক না হওয়া প্রসঙ্গে জানাতেই বার্নিকাট সচিবালয়ে এসেছিলেন বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিএসপি’র জন্য যে শর্তগুলো ছিলো আমরা সেটা পূরণ করেছি। কারখানাগুলো ভালোভাবেই চলছে। শ্রমিকদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা কারখানায় যাচ্ছি, শ্রমিকরা কোনো সমস্যার কথা বলছে না। অনেক দেশ আছে যাদের জিএসপি পাওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই অথচ তারা জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। আশা করি আগামীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকবে না। যদিও বাংলাদেশ এ সুবিধা পেলে খুব বেশি লাভবান হবে তা নয়। তবে এটা সম্মানজনক।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডিসেম্বরে টিকফার যে সভা হওয়ার কথা ছিলো সেটা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে। টিকফার সভা হয় মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে। মার্চ বা এপ্রিলে সুবিধাজনক সময়ে এই সভা হবে। আমরা নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছি। সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির খুব একটা পরিবর্তন হয় তা নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার যে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার মধ্যে টিপিপি বাতিল করার কথা আছে, এটা ভালো সংবাদ। শ্রমিক সংগঠন নিয়ে আমাদের ওপর সব সময় প্রচ- চাপ থাকতো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। আগামীতে এই সম্পর্ক আরও উন্নত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা আরও রফতানি করতে পারবো বলেও আশা করি। যে উদ্দেশ্যে টিকফা গঠন করা হয়েছিলো সেটা এগিয়ে যাবে।মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নের আরও সুযোগ আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বার্নিকাট বলেন, শ্রমিক সংগঠন কতগুলো আছে সেটা দেখার বিষয় না। দেখতে হবে শ্রমিকরা সংগঠন করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। সমস্যা হলে তার সমাধান করতে হবে।

বার্নিকাট বলেন, ডিসেম্বরে টিকফা বৈঠক হচ্ছে না। আগামী বছর মার্চ/এপ্রিলে সুবিধাজনক সময়ে এটা হবে। এই সময় নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণে ব্যস্ত থাকবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) মন্ত্রী পদমর্যাদার। প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইউএসটিআর-এরও পরির্বতন হয়। নতুন ইউএসটিআর নির্বাচিত হওয়ার পর মার্চ/এপ্রিলে বৈঠক হবে।