চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসলামী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার সাইফুল হকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এর তথ্য প্রকাশ করায় চাকুরী হারিয়েছেন ৪ সন্তানের এক পিতা। চাকুরী হারানোর ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগি । বানোয়াট অভিযোগে চাকুরী হারিয়ে ,চাকুরী পাবার আশায় বিভিন্ন মহলে দরখাস্ত করেও কোন নিরসন না পাওয়ায় হতাস হয়ে পড়েছেন মইদুর রহমান । অবশেষে গত ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ইং ভুক্তভোগী নাচোল বরেন্দ্র প্রেসক্লাব বরাবর একটি প্রতিবেদন ছাপানোর জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেন। সেই সংশ্লিষ্ট তদন্ত সুত্রে জানা যায়, ১৮,৪০,০৬৭ টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী চাকুরী হারিয়েছেন ৪ শিশু সন্তানের পিতা মইদুর রহমান। ইসলামী ব্যাংকের চাপাইনবাবগঞ্জ শাখার ম্যানেজার সাইফুল হক ও তার ভাই হাজী সইবুর হক এর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ উত্থাপন করায় অর্থ আত্মসাতের বানোয়াট অভিযোগে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মুন্দিখৈর গ্রামের ৮১ বছরের বৃদ্ধ সাইদুর রহমানের ৩য় ছেলে মইদুর রহমান (৩৫)।মইদুর রহমান নাচোল উপজেলায় অস্থায়ী ভাবে বসবাস করেন।
গত বছর মে মাসে ব্যাংকের চাপাইনবাবগঞ্জ শাখায় যোগদান করে তিনি লক্ষ্য করেন যে, ম্যানেজার সাইফুল হক তার ছোট ভাই হাজী সইবুর হক এর সাথে যৌথভাবে হুন্ডি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। মইদুর এর চোখে আরও ধরা পড়ে যে, ম্যানেজার সাইফুল হক কোন রেকর্ড সংরক্ষণ ছাড়াই ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিচ্ছেন। ম্যানেজারের এই বে-আইনী ও ঝুঁকিপূর্ণ তৎপরতা বন্ধ করতে মইদুর রহমান ম্যানেজার সাইফুল হক কে অনুরোধ করেন। ব্যাংক ম্যানেজারের অবৈধ তৎপরতা বন্ধের প্রচেষ্টা ও মইদুর রহমান এর ভাতিজা ডাঃ মাহবুব হাসান এর সাথে ম্যানেজার এর মেয়ের বিয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সাইফুল হক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর নাচোল পৌরসভা এলাকায় ২.৮৮ কাঠা জমি রেজিষ্ট্রির জন্য বন্ধু মোমিন এর চেক এর বিপরীতে ম্যানেজার সাইফুল হক এর অনুমতিক্রমে ব্যাংক হতে ১০ লক্ষ টাকা নেন মইদুর। সন্ধ্যার মধ্যে মোমিন টাকার ব্যবস্থা না করায় ম্যানেজার সাইফুল হক ১ দিন সময় দেন। ঐ দিন সন্ধ্যাকালীন ব্যাংকিং এর অন্য এক গ্রাহকের জমা হওয়া ৮,৪০,০৬৭ টাকা ম্যানেজার এর নির্দেশে মইদুর রহমান ঘাটতির ১০ লক্ষ টাকা বাবদ সমন্বয় করেন। গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটলেও ২৯ সেপ্টেম্বর ম্যানেজার সাইফুল হক সহকারী কর্মকর্তা গ্রেড-১ মইদুর রহমানকে ২১ সেপ্টেম্বর এর তারিখ উল্লেখ করে কৈফিয়ত নোটিশ দেন। ঐ দিন ব্যাংকে বসিয়েই মইদুর রহমানকে দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবাব লিখিয়ে নেন ম্যানেজার সাইফুল সহ সহযোগিরা । চাকুরী বিধি অনুসারে কৈফিয়তের জবাব ৭ দিনে দেওয়ার বিধান থাকলেও মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে জোরপূর্বক জবাব লেখানো হয়েছে। ম্যানেজারের ব্যবহারে হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন মইদুর।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে যে, ব্যাংকের চাকুরী বিধি লংঘন করে কোন প্রকার শুনানী গ্রহন ছাড়াই একতরফা ভাবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ তারিখে মইদুর রহমানকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক চাপাইনবাবগঞ্জ শাখার গ্রাহক আদর্শ ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর ম্যানেজার ফারুক হোসেনের টেলিফোনে অভিযোগ বিষয়ে কৈফিয়ত তলব নোটিশে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে ফারুক হোসেন মইদুর এর ব্যাপারে কোন অভিযোগ ম্যানেজারকে করেননি। চাকুরী ফিরে পাওয়ার জন্য মইদুর রহমান ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর গত ২৪ মার্চ আপীল করেন। ৬ মাস পর সম্প্রতি তাকে ব্যাংক হতে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, তার আপীল বিবেচনা করা হয়নি। মইদুর রহমান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ পুণঃতদন্তের জন্য গত ১৯ জুলাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান এর বরাবর আবেদন করেছেন যার জবাব এখনও পাননি ভুক্তভোগি। মইদুর রহমান ইতিমধ্যেই চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসককে তার প্রতি করা অবিচারের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। মইদুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেছেন যে, ম্যানেজার সাইফুল হক এর ভাই হাজী সইবুর হক এর এসএনডি ৩২ ও ৪৮নং একাউন্ট পরীক্ষা করলেই হুন্ডির অভিযোগ প্রমাণিত হবে। মিথ্যা অভিযোগে চাকুরীচ্যুতি হয়ে ৪ শিশু সন্তানের পিতা মইদুর রহমান বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে তিনি চাকুরী ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। মইদুর রহমান বলেছেন সুষ্ঠু তদন্ত হলে তিনি চাকুরী ফিরে পাবেন ও ব্যাংকের ৩/৪ জন কর্মকর্তা চাকুরী হারাতে পারেন। ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদধারী চাপাইনবাবগঞ্জ শাখা প্রধান সাইফুল হক প্রায় ৪ বছর যাবৎ একই শাখায় কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পরও বদলী না করায় এলাকার ব্যবসায়ীগণ বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগে ম্যানেজার সাইফুল হক ও তার ভাই সইবুর হকের গ্রেফতার দাবী করেছেন।
এ ব্যাপারে চাপাইনবাবগঞ্জ সংসদ সদস্য ওয়াদুদ আলী এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে, আমি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করছি ও ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক বিশৃঙ্খলা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার সাইফুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মইদুর রহমানের চাকুরী হারানোর বিষয়টি ব্যাংকের উর্ধতন কতৃপক্ষের বিষয়। তিনি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সরাসরি জড়িত বলে জানান।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগি মইদুর রহমান জানান,যদি সুষ্ঠ তদন্ত হয় তাহলে আমি ইনশাল্লাহ চাকুরি ফিরে পাবো।আমার প্রতি যে, অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন সাজানো নাটক। ব্যাংক ম্যানেজার সাইফুল হকের ছোট ভাই এর এসএন ডি ৩২ও ৪৮ নং এ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে তাদের অবৈধ হুন্ডী ব্যবসা বলে জানান। মইদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে আরো জানান, ম্যানেজার সাইফুল হক চক্রের গ্রেফতার দাবী করেছেন এবং ব্যাংক উর্ধতন কর্তপক্ষের কাছে মইদুর রহমান পুনরায় চাকুরীতে যোগদানের জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালের জুলাই মাসে মইদুর রহমান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর সহকারী অফিসার গ্রেড-৩ পদে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়ে মইদুর রহমান পাবনার কাশিনাথপুর, চাপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর ও চাপাইনবাবগঞ্জ শাখায় কাজ করছেন। ইসলামী ব্যাংকের চাপাইনবাবগঞ্জ শাখাতেই দু’দফায় মইদুর ৩ বছর চাকুরী করেছেন বলে জানা গেছে।
সংযুক্ত যাবতীয় ডকুমেন্ট ঃ-
মোঃ- নাসিম আলী, নাচোল ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি