23-11-16-pm_sylhet-28

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঐক্যবদ্ধভাবে পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক হুমকি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যে কোন হুমকি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে জালালাবাদ সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অধিনস্থ সদর দপ্তর ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৯টি ইউনিটের পতাকা অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে দেশের সম্পদ এবং দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক আখ্যায়িত করে বলেন, তাই পেশাদারিত্বের গুণগত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে।প্রধানমন্ত্রী সেনা সদস্যদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস,সহমর্মিতা,ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করারও পরামর্শ দেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষা নীতিতে দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী সমগ্র দেশকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছে। সেনাবাহিনীকেও সেই মোতাবেক সক্ষমতার দিক থেকে স্বতন্ত্র ও প্রশাসনিকভাবে সামর্থবান তিনটি কমান্ডে নিয়োজিত হতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী সেই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি জ্ঞানভিত্তিক পেশাদার বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম।তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি সদস্যের নৈতিক ও মানসিক শক্তি এবং পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছি।

অনুুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনা বাহিনী প্রধান আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, সেনা বাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল আনোয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকতাগণ উপস্থিত ছিলেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী নবগঠিত সদর দপ্তর ১১ পদাতিক বিগ্রেড এর পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, ১৭ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং সিলেটের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অভিবাদন জানায়।প্যারেড শেষে প্রধানমন্ত্রী সিলেট সেনানিবাসে বিভাগীয় সদর দপ্তরসহ ৮টি স্থায়ী প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই প্রণীত ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসাবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশ কিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়েছে। ফোর্সেস গোলের আওতায় ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের অত্যাধুনিক ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসাবে মিসাইল সিস্টেম, পদাতিক বাহিনীর ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল এবং আর্মি এভিয়েশনের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

তিনি বলেন, এছাড়াও সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। মিঠামইনে একটি রিভারাইন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু হয়েছে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিগেড পর্যায়ে স্পেশাল ফোর্স গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ও পারদর্শীতা বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদী সংলগ্ন এলাকায় লেবুখালী সেনানিবাসে ১টি পদাতিক ডিভিশন গঠনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এভাবেই দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী সেনাবাহিনী হিসাবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের সৈনিকদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। স্বল্পসংখ্যক সৈন্য দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম সর্বাধিক সৈন্য প্রেরণকারী দেশ। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি মিশন থেকে কম খরচে দেশে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক সাফল্যের অংশ হিসাবে জাতিসংঘ মিশনের বিভিন্ন উচ্চতর পদ যেমন, ফোর্স কমান্ডার, ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার, ফোর্স চীফ অব স্টাফ এবং সেক্টর কমান্ডার হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারগণ কর্মরত রয়েছেন।শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সৎ, কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের বাস্তবতার বিষয়ে অবগত আছি। এজন্য আপনাদের বিভিন্ন কল্যাণের বিষয়গুলোও সব সময়েই আমাদের সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর সকল পদবীর সৈনিকদের জন্য বাসস্থান ও মেস, সৈনিকদের জন্য এস.এম ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে।বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। তা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছে। এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন খন্ড চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমি সেনাবাহিনী প্রধান এবং আপনাদের সকলকে সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ১৭ পদাতিক ডিভিশনকে আরও পুর্ণতা দেওয়ার জন্য ১টি পদাতিক ব্রিগেডসহ ৯টি নতুন ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আরও একটি পদাতিক ব্রিগেড সদরসহ ৯টি ইউনিটের শুভযাত্রা হতে যাচ্ছে। আজকের এই দিনটি সেনাবাহিনীর জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দের দিন, পরিপূর্ণতা অর্জনের দিন।শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই নবগঠিত ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহের বিক্রমশালী প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এই ডিভিশনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।