দেশে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে স্বৈরতন্ত্র চলছে-এরশাদ

জেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন করব না। কারণ, এই নির্বাচন অর্থহীন। তবে জাপা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।রোববার রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে বিকল্পধারার সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শহিদুর রহমানের জাতীয় পার্টিতে যোগদান অনুষ্ঠানে এরশাদ তাঁর দলের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রস্তাবের প্রতি ইঙ্গিত করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘যাঁরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি বিধিসম্মত, বাস্তবসম্মত নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। যারা সংসদের বাইরে আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো অধিকার নেই।

রোববার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১ ডিসেম্বর। যাচাই-বাছাই ৩ ও ৪ ডিসেম্বর আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।বর্তমান আইন অনুযায়ী, একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। চেয়ারম্যানসহ এই ২০ জন সদস্যকে নির্বাচন করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।

রোববার রাজধানীর গুলশানে একটি কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন করব না। কারণ এই নির্বাচন অর্থহীন। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা আমরা জানি।গত ইউনিয়ন নির্বাচনে সারা দেশে ১৪৫ জন মানুষ মারা গেছে। আমরা হত্যা, হানাহানি, অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।

১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদের সরকার যে আইন করেছিলেন, সেখানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল, পরে ওই আইন অকার্যকর হয়ে পড়ে। ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়। আর কোনো জেলা পরিষদে কখনো ভোট হয়নি।২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। পরের বছর ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

অনির্বাচিত ওই প্রশাসকদের মেয়াদ শেষে আগামী ২৮ ডিসেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নির্বাচন হচ্ছে, যেখানে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ রাখা হয়নি।সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদ আইনে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই। প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন।

নির্বাচনের এ পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। তারা বলছে, সরাসরি ভোটে না হয়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন সংবিধান পরিপন্থি।এই ভোট ‘দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ১৭ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। জেলা পরিষদ নির্বাচনে না গেলেও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন এরশাদ।তিনি বলেন, আমরা সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ১ জানুয়ারি আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সেখানে আমরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।

সেই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে কীভাবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিৎ, সে বিষয়েও নিজের মতামত তুলে ধরেছেন এরশাদ। যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি বিধিসম্মত, বাস্তবসম্মত নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। যারা সংসদের বাইরে আছে, তাদের কথা বলার কোনো অধিকার নাই।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে তার প্রস্তাব জানাতে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন। সেখানে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের’ মতৈক্েযর ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠন করতে হবে।এরশাদ বলে, বিএনপি মাত্র আট বছর ক্ষমতার বাইরে, তাতেই তারা ছিন্নভিন্ন। শুধু টেলিভিশন পর্দায় তাদের দেখা যায়; মাঠে দেখা যায় না। আমরা ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও টিকে আছি… শুধু টিকে আছি তা নয়- আমরা মাঠে আছি, জনগণের হৃদয়ে আছি, টেলিভিশন পর্দায়ও আছি। আমরা বসে নেই। জনগণের মনের কথা আমরা জানি।

বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার শহিদুর রহমানের জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এরশাদ বলেন, শহিদুর রহমান জাতীয় পার্টিতে যোগদান করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি সশস্ত্রবাহিনীতে ছিলাম, তিনিও ছিলেন। আমি ৩৬ বছর সেনাবাহিনীতে থেকে দেশের জন্য কাজ করেছি, তারপর দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে রাজনীতিতে এসেছি। আমি আশা করব তিনিও দেশ এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করবেন।অন্যদের মধ্েয জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় পার্টি ঢাকা উত্তরের সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন।