19-11-16-pm_open-ctg-university-suborno-joyonti-10

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শনিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে গৌরবের ৫০ বছর’ পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, আমি নিজে আসতে পারলে খুব আনন্দিত হতাম। সবার সাথে দেখা হতো। মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসে, নিজে কেন গেলাম না।উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি তাকে নিজের মনে করতে হবে। ৃ যারা হলে থাকেন তাদের দায়িত্ব হলের সৌন্দর্য ঠিক রাখা।হল ও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষায় ফলজ ও ফুলের গাছ লাগানোর কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি সেশনজট ঠেকাতে শিক্ষকদেরও তৎপর হতে অনুরোধ জানান তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে প্রাক্তনদের সংগঠন ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশগুলোকে এগিয়ে আসারও অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।অ্যালামনাইদের অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া আর উৎসব হয়। এটা তাদের কাজ না। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করলাম তার জন্য কি করলাম। সেটিও দেখতে হবে।ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিটও অবমুক্ত করেন।

দুই দিনব্যাপী এই আয়োজন শুক্রবার বিকালে আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। শনিবারের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।চবি উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও আছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এজেএম নুরুদ্দিন চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সংসদ সদস্য ওয়াশিকা আয়শা খান, সাবিহা মুছা, আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক কামরুল হুদা ও প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরীও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়া হবে, বিকালে হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।এদিকে অর্ধ শতকপূর্তির সুবর্ণচ্ছটায় অংশ নিতে বিপুল সংখ্যক প্রাক্তন শিক্ষার্থী সকাল থেকেই পাহাড়ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন। দশকপুরনো সাবেক শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের কাছে পেয়ে হয়ে উঠেন আত্মহারা।

জারুলতলা,কলাভবন ঝুপড়ি, রেল স্টেশনসহ সর্বত্র পুনর্মিলনীর আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরাও, মেতে উঠছেন আনন্দ-আড্ডায়। গান, স্মৃতিচারণ আর পুরনো সহপাঠীদের সাথে মিলনের আনন্দে উৎসবের রং নিয়েছে পুরো চবি ক্যাম্পাস।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সুবর্ণজয়ন্তীর পুনর্মিলনীতে অংশ নিতে ১০ হাজারেরও বেশি সাবেক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেন। এর বাইরেও অসংখ্য সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এ আনন্দ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সামুদ্রিক জরিপ জাহাজ আরভি মীন সন্ধানী’র কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন।এর মাধ্যমে দেশের সম্প্রসারিত সমুদ্রসীমায় আগামী মাস থেকে সামুদ্রিক জীব বৈচিত্রের জরিপ কাজ শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের জনগণের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উন্নয়ন ও সন্ত্রাস বিরোধী মতবিনিময় সভা চলাকালিন চট্টগ্রাম প্রান্তে থাকা আর ভি মীন সন্ধানী জরিপ জাহাজটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিবেশি ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে নিষ্পত্তির পর বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারে এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে জীব বৈচিত্র, বিশেষত সামুদ্রিক মাছ সম্পর্কিত জরিপ পরিচালনায় আরভি মীন সন্ধানী জাহাজটি কাজে লাগানো হবে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং মালয়েশীয় সরকার এই জরিপ কাজে কারিগরি সহায়তা দেবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার বক্তৃতায় বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে সমুদ্র আইন করে গিয়েছিলেন। মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করে সমুদ্রসীমা নির্দিষ্ট করে একটি চুক্তিও করে গিয়েছিলেন। আর ভারতের সাথে সীমানা নির্দিষ্টকরণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেও ৭৫’র ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে তিনি সপরিবারে নিহত হলে সেটা সেখানেই থেমে যায়। ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বাংলাদেশের এসব সমস্যা সমাধানের কোনদিনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই।তিনি বলেন, এমনকি আমাদের এই সীমানায় যে অধিকার রয়েছে সেগুলো কখনও পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে আলোচনা বা আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরেনি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা এটি নিয়ে আবার কাজ শুরু করি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিতক সমুদ্রসীমা আইন করে এবং আমরা ক্ষমতায় এসেই সেই আইনকে অনুসমর্থন করি। একইসাথে জাতিসংঘে আমাদের সমুদ্রসীমা নির্দিষ্ট করার বিষয়টি তুলে ধরি। অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আসতে না পারায় বিএনপি-জামায়াত জোট আবারো সেই কাজকে ফেলে রাখে।তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে উদ্যোগ গ্রহণ করি। অত্যন্ত তরিঘরি করে এবং গোপনীয়তার সঙ্গে আমরা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক আদালতে যাই এবং সমুদ্য আদালতের রায়ে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হই।এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানোয় তাঁর ব্ল ইকোনমির উদ্যোগকে তুলে ধরেন এবং দেশের মৎস সম্পদ সম্প্রসারণে জেলেদের জন্য অফ সিজনে বিনামূল্যে খাদ্যপ্রদান, বিকল্প হিসেবে খাচায় মৎস চাষ, মাছের ব্রিডিংকালে মাছ ধরার বন্ধ থাকার সময় বিভিন্ন জেলেদের খাদ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচি তুলে ধরেন।অনুষ্ঠানে মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছায়েদুল হক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মকিসুদুল হাসান খান চট্টগ্রামের বোর্ড ক্লাব প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতা করেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়া থেকে সর্বাধুনিক এই গবেষনা জাহাজটি আনা হয়েছে। মীন সন্ধানী জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৩৭ দশমিক ৮ মিটার, প্রস্থ ৯ দশমিক ২ মিটার এবং গভীরতা ৩ দশমিক ৩ মিটার। জাহাজটিতে ২৮ জন ক্রু ও গবেষকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নতুন এই জাহাজটি সমুদ্রের পানিতে ৩৬০ ডিগ্রি অবতলে ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত জীবিত যেকোন জলজ প্রাণী চিহ্নিত করতে সক্ষম।উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে প্রথমবার ১৯৭৩ সালে বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক প্রাণিজ সম্পদের উপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।