আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে দ্বিতীয় কিস্তিতে আরও ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সিটিসেল।বৃহস্পতিবার দুপুরে বিটিআরসিতে সিটিসেল এ টাকা জমা দেয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা।১৯ নভেম্বরের মধ্যে দেনার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে গত ৬ নভেম্বর সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দেয় বিটিআরসি।আদালতের নির্দেশনা মেনে দ্বিতীয় কিস্তিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির পাওনার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে থাকা মোবাইল অপারেটর সিটিসেল।
বিটিআরসির দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খান বৃহস্পতিবার বলেন, দুপুরে সিটিসেল ১০০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে জমা দিয়েছে।কয়েক দফা তাগাদা ও নোটিসের পরও বকেয়া পরিশোধ না করায় গত ২১ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। দেনা পরিশোধের প্রতিশ্র“তিতে আদালতের নির্দেশে ১৭ দিন পর সিটিসেলের সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।তবে আপিল বিভাগের আদেশে বলা হয়, আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে সিটিসেল বকেয়ার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে আবারও তরঙ্গ বন্ধ করে দিতে পারবে বিটিআরসি।ওই আদেশ মেনে সময় শেষ হওয়ার দুদিন আগে বৃহস্পতিবার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করল সিটিসেল।
ঘটনাক্রম: পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধের জন্য কয়েক দফা তাগাদা দিয়েও তা না পেয়ে গত জুলাই মাসে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করার উদ্েযাগের কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। পরের মাসে সিটিসেলকে নোটিস দেওয়া হয়।ওই নোটিসের বিরুদ্ধে সিটিসেল হাই কোর্টে যায়। ২২ অগাস্ট হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, নোটিসের জবাব দিতে বিটিআরসি যে এক মাস সময় দিয়েছিল, ওই সময় পর্যন্ত সিটিসেলকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় বিটিআরসি। ২৯ অগাস্ট আপিল বিভাগের আদেশে দেনা শোধের জন্য সিটিসেলকে দুই মাস সময় দেয় আপিল বিভাগ। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, বকেয়া ৪৭৭ কোটি টাকার মধ্েয দুই তৃতীয়াংশ প্রথম এক মাসে এবং এক তৃতীয়াংশ পরবর্তী এক মাসে পরিশোধ করতে হবে।এছাড়া ১৭ অগাস্টের পর থেকে প্রতিদিন বিটিআরসির কাছে পাওনা হওয়া ১৮ লাখ টাকা করে অবিলম্বে পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলে, টাকা না পেলে বিটিআরসি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে।২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করে বিটিআরসি। মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন বিটিআরসি কর্মকর্তারা।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সেদিন জানান, একমাসের প্রথম কিস্তিতে নির্ধারিত ৩১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার মধ্েয সিটিসেল মাত্র ১৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।এরপর সিটিসেল তরঙ্গ বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত বা পুনরায় তরঙ্গ বরাদ্দের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়। শুনানি শেষে আদালত ৩ নভেম্বর আদেশের দিন রাখে। ৩ নভেম্বর সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দিতে বলা হয়। ৩ নভেম্বরের শুনানিতে বিটিআরসি তাদের দাবির পরিমাণ কমিয়ে ৩৯৭ কোটি টাকায় নিয়ে আসে। কিন্তু ওই অংক নিয়েও সিটিসেল আপত্তি তোলে।এই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় কিস্তিতে সিটিসেলকে কত টাকা দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয় আদালত। বলা হয়, ১৯ নভেম্বরের মধ্যে সিটিসেল ১০০ কোটি টাকা না দিলে বিটিআরসি আবার তরঙ্গ বন্ধ করে দিতে পারবে।তিন দিনেও তরঙ্গ ফিরে না পেয়ে রোববার ফের আদালতে যায় সিটিসেল। তাদের আবেদনের শুনানি করে এ বিষয়ে বিটিআরসির ব্যাখা জানতে চায় আপিল বিভাগ। পরে বিটিআরসির পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া তারা ইতোমধ্েয শুরু করেছে।১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল), যা পরে মালিকানার হাতবদলে সিটিসেলে পরিণত হয়।সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড।এছাড়া সিঙ্গাপুরের সিংটেল এশিয়া প্যাসিফিক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর ৪৫ শতাংশ এবং ফার ইস্ট টেলিকম লিমিটেড ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক।