%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%8f%e0%a6%ae%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0

ঢাকার উত্তরা ও আদাবর এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সন্দেহভাজন পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব। জেএমবির সরওয়ার-তামিম গ্র“পের পাঁচ জঙ্গিকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এরা হলেন- মাওলানা আব্দুল হাকিম ফরিদী ওরফে সুফিয়ান (৪০), রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাজীব ওরফে আহমেদ (২৯), গাজী কামরুস সালাম সোহান ওরফে আবু আব্দুল্লাহ (২৭), মো. সোহেল বান্না ওরফে খাদেম ওরফে মোয়াজ্জিন ওরফে সোহেল ওরফে শহীদুল্লাহ (২৩) এবং শেখ মো. আবু সালেহ ওরফে লিটন ওরফে হুরাইয়া (৪২)।

বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো মোবাইল ফোনের খুদে বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়।খুদে বার্তায় বলা হয়, আটক হওয়া পাঁচ জঙ্গির মধ্যে প্রশিক্ষক, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ও অর্থ সমন্বয়কারী রয়েছে।ওই পাঁচজন জেএমবির ‘সারোয়ার জাহান- তামিম চৌধুরী গ্রুপের’ সদস্য এবং তাদের মধ্যে সংগঠনের অর্থ সমন্বয়কারী, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ও জঙ্গি প্রশিক্ষক রয়েছেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।র‌্যাব সদরদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, র‌্যাব-২ এর একটি দল বুধবার রাতে অস্ত্র ও গুলিসহ তাদের গ্রেপ্তার করে।পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের সংবাদ সম্মেলন করে একটি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি, ১০টি ককটেল, পাঁচটি ডেটোনেটর, একট কয়েল ও এক কেজি ‘সাদা পাউডার’ উদ্ধারের কথা জানান র‌্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ খান।তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জেএমবির প্রথম সারির অনেক নেতা সাম্প্রতিক সময়ে নিহত হয়েছেন; কয়েকজন গ্রেপ্তারও আছেন। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে বাকি সদস্যরা ছোট পরিসরে ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। গ্রেপ্তার ওই পাঁচজন এ উদ্দেশ্য নিয়েই ঢাকায় এসেছিল বলে মুফতি মাহমুদ খানের ভাষ্য।ওই পাঁচজনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং জঙ্গি কর্মকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্যও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

গাজী কারুরুস সালাম সোহান: পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ২০০৭ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট থেকে এইচএসসি পাশ করে গাজীপুর ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে ডিগ্রি নেন।র‌্যাব বলছে, ২০১৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান সিফাত নামে একজনের মাধ্যমে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপে জড়ান সোহান। চলতি বছর ৯ অগাস্ট র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর সিফাতও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

আব্দুল হাকিম: পড়ালোখা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক মাদ্রাসায়। ১৯৯৭ সালে খিলগাঁও মাখাবাপুর উলুম মাদ্রাসা থেকে মাস্টার্স করেন।র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, হাকিম একজন ভালো বক্তা ও প্রশিক্ষক। তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হন।

সোহেল রানা: ২০১৩ সালে জঙ্গিবাদে জাড়ানো সোহেল থানা আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছিলেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঝিনাইদহ এলাকায় একটি থানার বিভিন্ন ডিউটি রোস্টার ‘ফলো’ করেছিলেন সোহেল। কিন্তু তার পরিকল্পনা পরে ভেস্তে যায়।

আবু সালেহ: ২০০২ সাল থেকে জঙ্গিবাদে জড়ানো সালেহ একজন কারাতে প্রশিক্ষক। ২০০৩ সালে তিনি কারাতে শেখার জন্য কলাবাগানের একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন এবং পরে ব্ল্যাক বেল্ট পান। সালেহ জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপে শারীরিক প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

রাজিবুল ইসলাম: তামিম-সারোয়ার গ্রুপের এই সদস্য সিলেটে অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ নেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।র‌্যাবের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।গুলশানে জঙ্গি হামলাসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আলোচিত জঙ্গি হামলাগুলোর জন্য নব্য জেএমবিকেই দায়ী করে আসছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।জঙ্গি নির্মূলে বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতার মধ্যে গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানের সময় পাঁচতলা থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়। তখন র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহত ব্যক্তির নাম আব্দুর রহমান আয়নাল, তিনিই নব্য জেএমবির প্রধান অর্থ যোগানদাতা।তার ১৩ দিন পর র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। তিনি নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা।

সারোয়ার জাহানই শায়খ আবু ইব্রাহীম আল হানিফ নামে নব্য জেএমবি গঠন করে আমিরের দায়িত্ব নেন জানিয়ে এর প্রমাণ হিসেবে র‌্যাব প্রধান নব্য জেএমবি কর্মকান্ড শুরুর একটি ঘোষণার অনুলিপি সংবাদ সম্মেলনে দেখান।তিনি বলেন, ওই ঘোষণায় আবু ইব্রাহীমের সঙ্গে শেখ আবু দুজুনা নামে আরেকজনের সই আছে। সেই আবু দুজুনা হলেন নারায়ণগঞ্জের অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরী, যাকে এতোদিন নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক বলা হচ্ছিল।র‌্যাবের ভাষ্েযর বিপরীতে গত ২৬ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, ওই সারোয়ার জাহান আসলে নব্য জেএমবির তৃতীয় পর্যায়ের নেতা।তার নাম আমাদের কাছে এসেছে, সে মূলত তামিমের (নিহত তামিম চৌধুরী) ডেপুটিদের পরের ধাপের নেতা হিসাবে।গত বছর গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকান্ডে নব্য জেএমবি জড়িত এবং সারোয়ার বা রহমানই ওই হামলার নির্দেশদাতা বলে দাবি করেছিলেন র‌্যাব প্রধান বেনজীর।তাভেল্লা হত্যাকান্ডের আলোচিত ঘটনায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্তের পর বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম, তার ভাই এবং আরও পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আদালতে অভিযোগ গঠনও হয়েছে। তাতে সারোয়ার কিংবা অন্য কোনো জঙ্গিকে আসামি করা হয়নি।

image : bdnews24