বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সর্বোত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের আন্তরিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা সবার দায়িত্ব।
জনগণের সঙ্গে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিভাগের ৮ জেলার জনগণের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মতবিনিময়ের লক্ষ্যে এ ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘরে হামলা এবং সবশেষ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন সাঁওতালের মৃত্যু নিয়ে আলোচনার মধ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বললেন সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসকে আমরা কোনোদিন প্রশ্রয় দেব না। এই দেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হবে না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব না।আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সর্বোতভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। ফেইসবুকে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মের মূল বাণী তাই। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করতে পারবে, এটাই ইসলামের কথা। এটাই পবিত্র কোরআনের কথা। আমরা এটাই মেনে চলি।জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইসলামের পথ না। কাজেই এটাই চাইব, দেশের প্রত্যেকটা মসজিদে ইমাম সাহেবরা বা যারা জুমার নামাজের আগে খুৎবা দেন, সেখানে আপনারা এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নবী (স.) কী বলে গেছেন, কোরআনে কি আছে, ইসলাম ধর্ম কী বলে, এই বিষয়গুলো মানুষকে আরও ভালোভাবে জানাতে হবে। যাতে এই ধরণের আত্মঘাতী পথে পা না বাড়ায়।আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশে সম্প্রীতি বজায় থাকবে, দেশের উন্নতি হবে” বলেন শেখ হাসিনা।
দেশের সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সর্বতোভাবে সবার। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে।কনফারেন্সের সঙ্গে সময় মিলিয়ে বিভাগের ৮ জেলার অন্তত ২ হাজার ৯শ’ ৮১টি স্থানে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ হচ্ছে। সেসব সমাবেশে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা। এসব সমাবেশের মধ্যে অন্তত ৫টির সমাবেশে জড়ো হওয়া জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন শেখ হাসিনা।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করার কথাও তুলে ধরেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে গড়ছিলেন, দেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করছিলেন, তখন পরাজিত শক্তি চক্রান্ত করে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশে অন্ধকার নেমে আসে। তারপর ক্ষমতা দখলকারীরা লুটপাট শুরু করে।২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এ সরকারের উন্নয়ন-জনসেবায় মানুষ বুঝতে পারে, সরকার জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ তার উন্নয়নের ধারা এখনও অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, দেশ যখন উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সেই পরাজিত শক্তি মানুষকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধ করে, সহিংসতা চালায়। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। তাদের আমলেই দেশবাসী দেখেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা কীভাবে সন্ত্রাসীদের মদত দিয়েছে, মানুষের পা ওপরের দিকে বেঁধে মাথা নিচের দিকে রেখে ঝুলিয়ে রেখেছে।তাদের সেই অবরোধ-হরতালের আগুনে ৫০৮ জন মানুষ দগ্ধ হয়েছেন, ৫৮২ স্কুল তারা আগুনে পুড়িয়েছে। সাধারণ মানুষকে পেট্রোল বোমার আগুনে মেরেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনী অফিসারকেও তারা পুড়িয়ে মেরেছে। তারাই এ দেশের ছেলে-মেয়েদের বিপথে নিয়ে গেছে।প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কড়া অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, এখন একটা শ্রেণী হয়েছে, তারা একদিকে ইসলামের নাম নিচ্ছে, আরেকদিকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চালাচ্ছে। আমাদের সরকার এই ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। জঙ্গিবাদকে কখনো প্রশ্রয় দেবো না।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এটা বাস্তবতা। আমি আগে যে বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, সেখানেও বলেছি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আপনাদেরও বলছি, জ¦ালাও-পোড়াও-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকলকে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।বিএনপির এক নেতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এক নেতা বলেছেন, তারা নাকি আন্দোলনের তীর দেখিয়েছেন, নভেম্বরে আন্দোলন দেখাবেন। জনগণ অতীতেও জ¦ালা-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, এবারও রুখে দাঁড়াবে। আন্দোলনের নামে মানুষ খুন ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোদিন জনসমর্থন পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘু নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সর্বতোভাবে সবার। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে।তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, সব ধর্মই শান্তির। ইসলামের নামে কোনো ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আমি মসজিদের ইমামদের বলবো, তারা যেন জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। সর্বোপরি অভিভাবক, শিক্ষক, সাধারণ জনগণ সবাইকে, আহ্বান জানাবো, জ¦ালাও-পোড়াও-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে জনগণকে বলে দেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যেকের ওপর নজর রাখবেন, সহযোগিতা করবেন। কেউ বিপথে যায় কিনা খেয়াল রাখবেন। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে হবে। কাউকে বিপথে যেতে দেওয়া হবে না।