%e0%a6%b6%e0%a6%a4-%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a7%80-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%89

দক্ষিণাঞ্চলের শত বছরের হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস লীলা শুরু হচ্ছে আজ রবিবার। ইতোমধ্যে সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। নেয়া হয়েছে কুয়াকাটায় সাগরে রাসভক্তদের পূণ্য¯œানের সকল প্রস্তুতি। মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। রবিবার রাতে কুয়াকাটায় সমাবেশ ঘটবে হাজার হাজার পূন্যার্থীর। ভরা পূর্ণিমায় সাগরে রাতে কিংবা সোমবার প্রত্যুষে পূণ্য¯œান শেষে রাসভক্ত নর-নারী কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে পাঁচ দিনের ধর্মীয় উৎসব ও রাসমেলায় অংশ নেবেন। রাস উৎসবকে ঘিরে এখন কুয়াকাটাসহ কলাপাড়ার গোটা উপজেলায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কুয়াকাটা সৈকতপাড়ে এবং কলাপাড়ায় সেবাশ্রম প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নির্বিঘেœ এ রাস মেলা সম্পন্নের লক্ষ্যে জেলা-উপজেলা প্রশাসন কয়েকদফা সভা করেছেন । নেয়া হয়েছে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঐতিহ্যবাহী এ রাস উৎসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাসভক্ত নর-নারী ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটে। আয়োজকরা ধারনা করছেন অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষের সমাবেশ ঘটবে রবিবার রাতের মধ্যে। প্রত্যেক বছর কার্তিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে এ রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের রাতে কুয়াকাটায় রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রাঙ্গনে ধর্মীয় উৎসব চলে। স্থাপন করা হয় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। এছাড়া স্থানীয় অনন্ত কুমার মুখার্জীর বাড়ির প্রাঙ্গনে স্থাপিত মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের বিশাল আকৃতির যুগল প্রতিমা দর্শনেও ভিড় জমে ভক্তদের। সেখানে শত শত ভক্তের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। এবছরও এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রাসমেলা ও পূণ্য¯œানকে ঘিরে উদযাপন কমিটিকে সকল প্রকার সহায়তা দিতে বরাবরের মতো পটুয়াখালী জেলা ও কলাপাড়া উপজেলা-পুলিশ প্রশাসন, মহিপুর থানা পুলিশ, কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ, কুয়াকাটা পৌরসভা, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। রাসমেলায় আগতদের থাকা খাওয়া নির্বিঘœ করতে আবাসিক হোটেল ভাড়া ও রেস্তরাঁয় খাবারের তালিকামূল্য টাঙ্গানো, সুপেয় পানি ও পর্যাপ্ত স্যনিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করণ, যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং নিষিদ্ধ করে ইতোমধ্যে পৌরসভা থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে চারদিকে দুই কিমির মধ্যে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রাখার পাশাপাশি পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখার কথা জানিয়েছে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন।

হিন্দু ধর্মীয় মতে দাপরযুগে কংশ রাজার অত্যাচারে যখন মানবকুল অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল তখন সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনায় অত্যাচারী রাজার হাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করতে স্বর্য় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। শ্রীকৃষ্ণের অলৌকিক ক্ষমতাবলে কংস রাজাকে বধ করে মানবকুলকে রক্ষা করেন। পরবর্তীতে মানুষের মধ্যে হিংসা, হানাহানি, বিদ্বেষ মোচনের লক্ষ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় করতে শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে বৃন্দাবনের তমাল ও কদমকুঞ্জে পূর্ণিমার এই তিথিতে নিষ্কাম প্রেমে মিলিত হয়ে এক উপাখ্যানের রচনা করেন। যা তখন থেকে রাসউৎবে পরিণত হয়। মদন মোহন সেবাশ্রমের সভাপতি ও রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হাওলাদার জানান, ১৯২৭ সালে সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠাকালীণ থেকেই রাস উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। বৃন্দাবনের মদন মোহন মন্দিরের ঠাকুরের অনুমতি নিয়েই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে রাসপুর্ণিমার এ পূজা ও রাসলীলা উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। ওই সময় থেকেই কুয়াকাটায় শুরু হয় সাগরে পূন্য¯œান।কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটায় যেতে এবছরই ফেরিবিহীন যোগাযোগের পথ সুগম হওয়ায় রাসভক্তদের ব্যাপক আগমন ঘটবে বলে আয়োজকদের বিশ^াস। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সাদিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি প্রশাসনের কন্ট্রোলরুম থাকবে। এছাড়া পুরো রাসমেলা এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রেখে নিরাপত্তা বিধানে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি র‌্যাব ও একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। থাকবে একাধিক মেডিকেল টিম।