বাংলাদেশ_ব্যাংকের_লোগো.svg

ফিলিপাইনে উদ্ধার হওয়া ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফিলিপাইনে বাংলাদেশের দূতাবাসে জমা হয়েছে। শুক্রবার ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টিম এ অর্থ গ্রহণ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান।তিনি বলেন, জমা হওয়া অর্থের মধ্যে ডলারের অংশটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে নিউইয়র্ক ফেডের বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে জমা হবে। আর পেসো অংশটি বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসাবের মাধ্যমে নিউইয়র্ক ফেডে জমা হবে।এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের উদ্ধার হওয়া দেড় কোটি ডলার ফেরত আনতে একটি প্রতিনিধিদল ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় যায়। ৮ নভেম্বর প্রতিনিধিদলটি ম্যানিলায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে অর্থ ফেরত আসা নিয়ে আলোচনা করে। এই দলে রয়েছেন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক (চুক্তিভিত্তিক) দেবপ্রসাদ দেবনাথ ও যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব।

গত সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ চুরির উদ্ধার হওয়া এই দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে ফেরত দিতে নির্দেশ দেন ফিলিপাইনের আদালত। এই অর্থ ক্যাসিনো (জুয়া খেলার স্থান) ব্যবসায়ী কিম অংয়ের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এই অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা ছিল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর দেশটির আদালত এ অর্থের মালিকানা বাংলাদেশের বলে স্বীকৃতি দেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান শনিবার এই তথ্য জানিয়ে বলেন, আমাদের অ্যাম্বাসেডর অর্থ গ্রহণ করেছেন।

এটার প্রসেসিং চলছে। আজ আমাদের এখানে ছুটি, কাল তো সবখানে ছুটি। সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে এটা আমাদের রিজার্ভে যোগ হবে।ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ আগেই জানিয়েছিলেন, একটি ক্যাসিনোর মালিক কিম অং এবং তার ইস্টার্ন হাওয়াই লেজার কোম্পানির ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল।

ক্যাসিনো মালিক অং দুই দফায় এক কোটি ডলারের বেশি ফেরত দেন, যা তিনি দুইজন চীনা জুয়াড়ির কাছ থেকে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।গত সেপ্টেম্বরে ফিলিপিন্সের আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে এই দেড় কোটি ডলারের মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরই অর্থ ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।গত ফেব্র“য়ারির শুরুতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়।এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরিয়ে নেওয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। আর একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।

রিজল ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়।এর মধ্যেক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেওয়া দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে অগাস্টে ম্যানিলা গিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল।

দেশটির বিচার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই পরিমাণ অর্থের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলার সঙ্গে জমা দেওয়ার জন্য একটি হলফনামা তারা তৈরি করেছেন বলে প্রতিনিধি দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে।রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ দেবনাথ ও আব্দুর রব ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসাইন ম্যানিলায় যান। প্রতিনিধি দলটির চারদিনের সফর করেন ।

গেল ৪ ও ৫ই ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ ডলারের হদিস পাওয়া গেছে, যার দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের কাছে রয়েছে। আর বাকিটা ফিলিপিন্সের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে।রয়টার্স বলছে, দেশটির বিচার বিভাগ দেড় কোটি ডলারের মালিকানা দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি দলকে মামলা করতে বলেছে। তবে ক্যাসিনোর ওই অর্থ উদ্ধারের জন্য ভিন্ন প্রচষ্টা চালাতে হবে।

সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের তৈরি করা হলফনামায় ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লেখা নিউ ইয়র্ক ফেডের একটি চিঠির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকেই ওই অর্থ হয়েছে বলে রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে।আদালতে মামলা করার জন্য ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের কাছে ওই হলফনামা দেওয়া হবে।তখন ম্যানিলায় প্রতিনিধি দলকে সহায়তাকারী ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ দেড় কোটি ডলার এক মাসের মধ্যেই ফেরত পাওয়া যাবে বলে রয়টার্সের কাছে আশার কথা বলেন। গত ফেব্র“য়ারির শুরুতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়।

এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরিয়ে নেওয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। আর একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।রিজল ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিক যে দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্স সরকারের হাতে ফেরত দিয়েছেন, তা পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল ম্যানিলায় রয়েছেন।তখন রাষ্ট্রদূত গোমেজ বলেন, আমরা দেড় কোটি ডলার উদ্ধারের শেষ ধাপে রয়েছি।তবে বাকিটার বিষয়ে ফিলিপিন্সের সিনেটে আবার শুনানি শুরু হবে বলে আমাদের আশা, যাতে ঘটনার বিষয়ে আমরা আরও বিস্তারিত জানতে পারি।

বাংলাদেশের এই অর্থ চুরির বিষয়ে ফিলিপিন্সের সিনেটে যে শুনানি চলছিল দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে তা মে মাসে বন্ধ হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুয়ের্তে ক্ষমতায় আসার পর শুনানি শুরুর তারিখ এখনো ঘোষণা হয়নি।বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, চুরি করে নেওয়া ওই অর্থ ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যাওয়ার পেছনে শুধু কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ত্রুটিই নয়, আরসিবিসির পদ্ধতিগত ব্যর্থতাও দায়ী।গত মার্চে সিনেটে শুনানিতে ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।