স্ত্রীসহ পালিয়েছেন ক্রিকেটার শাহাদাত

গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন জাহানকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। রোববার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তানজিনা ইসমাঈল এ রায় দেন।রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেটার শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন জাহান।রায় ঘোষণার পর শাহাদাত বলেন, তিনি নির্দোষ। আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। শিগগিরই ক্রিকেটে ফেরার আশা করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি আলী আজগর স্বপন বলেন, এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁরা সন্তুষ্ট নন।তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে নির্যাতনের অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন খন্দকার মোজাম্মেল হক নামের এক সংবাদকর্মী। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়। চলতি বছরের ৫ ফেব্র“য়ারি অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। এই মামলায় জেসমিনকে গত বছর ৩ অক্টোবর মালিবাগে তাঁর বাবার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৫ অক্টোবর শাহাদাত আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকেও কারাগারে পাঠানো হয়। শাহাদাতকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরে এই দম্পতি জামিনে মুক্তি পান।অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই দম্পতির সাত থেকে ১৪ বছরের কারাদন্ড হতে পারত। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে জানানো হয়।

আদালত বলেছে, শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে- এমন কোনো বক্তব্য ওই গৃহকর্মী আদালতে উপস্থাপন করেনি। ভিকটিমসহ সাক্ষীদের সাক্ষ্যে এটা প্রমাণিত যে তার শরীরের জখম ছিল দুর্ঘটনাজনিত।এমনকি ওই জখম পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে বা রোগের কারণে হতে পারে। মামলার পাঁচ নম্বর সাক্ষী চিকিৎসক মাধবী কর্মকার নির্যাতিতের শরীরে দাহ্য পদার্থের কোনো চিহ্ন পাননি।ছয় নম্বর সাক্ষী ডা. নুসরাত ফাতেমা ও সাত নম্বর সাক্ষী মো. সফিকুর রহমান এ মামলায় কেবল আনুষ্ঠানিক সাক্ষ্য দিয়েছেন জানিয়ে বিচারক বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী এবং ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয় না।গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী হারিয়ে গেছে জানিয়ে শাহাদত মিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করার কয়েক ঘণ্টা পর খন্দকার মোজাম্মেল হক নামের এক সাংবাদিক পল্লবীর সাংবাদিক কলোনি থেকে ১১ বছরের শিশুটিকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন।পরে শিশুটি থানায় শাহাদত ও তার স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্যর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করে। উদ্ধারকারী সাংবাদিক বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।এরপর পুলিশ জেসমিনকে গ্রেপ্তার করে; শাহাদত আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ১১ বছরের ওই গৃহকর্মী আদালতে জবানবন্দি দেয়। তদন্ত শেষে ২৯ ডিসেম্বর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক শফিকুর রহমান আদালতে অভিযোগপত্র দেন।ডিসেম্বরেই জামিনে কারামুক্ত হন শাহাদাত ও তার স্ত্রী। গত ২২ ফেব্র“য়ারি একই বিচারক ওই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।গত ৩১ অক্টোবর দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি করে বিচারক তানজিলা ইসমাইল রায়ের জন্য ৬ নভেম্বর দিন রাখেন।আসামিপক্ষের দাবি ছিল, ওই গৃহকর্মী ‘রাগ করে’ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল; আসামিদের হাতে সে নির্যাতিত হয়নি।এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট সাতজনের সাক্ষ্য শোনে আদালত। আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানী করেন বিশেষ কৌঁসুলি আলী আসগর স্বপন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন কাজী নজিবুল্লাহ হীরু।

আলী আসগর স্বপন রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি রায়ে সন্তুষ্ট নই। মামলা পরিচালনায় আমার কোনো ত্রুটি কিংবা অবহেলা ছিল না। ভিকটিম যখন বলেছে তাকে কেউ নির্যাতন করেনি, পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে, তখন তাকে আমি বৈরী ঘোষণা করে জেরা করেছিলাম।আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়ের কপি হাতে পেলে পুরো রায় দেখে সিদ্ধান্ত নেব।শাহাদাত বা স্ত্রী রায়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।শাহাদাতের শ্বশুর শাহজাহান ভূইয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছি।