%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b8-%e0%a6%9a%e0%a7%87%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%9c%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%ac-%e0%a6%b9

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়ি ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করে ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি। সরকার জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে সরকারের পদত্যাগও চেয়েছে দলটি।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার দায় স্বীকার ও নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমান সরকারের পদত্যাগও দাবি করেছে দলটি।

শনিবার সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ।এর আগে শুক্রবার হাফিজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সঞ্জিব চৌধুরী, উকিল আব্দুস সাত্তার, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রনেইটর আহ্বায়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তী, আব্দুল আউয়াল খান, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, সুলীল বড়ুয়া, ব্যারিস্টার রুমিন ফারাহান ও সৈয়দ ইকরামুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের বিষয়টি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে হাজার বছরের শান্ত জনপদ নাসিরনগরে এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটলো তার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানে ভূমিকা রাখার জন্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ।

পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি, আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।হাফিজউদ্দিন বলেন, আমাদের এ দাবির ফলে আগামীকাল তারা পদত্যাগ করবে-এমনটি আমরা আশা করি না। তবে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্দি করে জনরোষ থেকে বাঁচাতে এবং একটি সভ্য, মার্জিত আইনভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে।ঘটনাস্থল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণানা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার ব্যাপকতা দেখে আমরা অত্যন্ত বেদনাহত। এর নিন্দা জানাবার ভাষা আমাদের জানা নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে আওয়ামী লীগ সরাকরের আমলে এ ধরনের হামলা আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবণতি এবং গণতন্ত্রহীনতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। তারপরও হিন্দুদের উপরে এ সরকারের আমলে এত হামলার প্রধান কারণ হলো, তাদের ভোটের আর প্রয়োজন নেই আওয়ামী লীগের। হাফিজ বলেন, ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন; পরবর্তীকালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন- সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনগণের কোনো ভোট আওয়ামী লীগের প্রয়োজন হয়নি। এ কারণেই এখন তারা কাউকে কদর করছে না।

হামলার সময় পুলিশ বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল অভিযোগ তুলে হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার সময় পুলিশ বাহিনী বরাবরই নিষ্ক্রিয় থেকেছে। নাসিরনগরে প্রথম যে ঘটনা ঘটেছে, সেটির ব্যাপারে আমরা ধরে নিতে পারি, পুলিশ আগে কিছু জানতো না। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে এতগুলো বাড়িতে হামলা হলো- এখানে পুলিশ বাহিনী দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের পেশাদারিত্ব একেবারেই নেই। তারা মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে এ কারণে যে, তারা একটি দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। অর্পিত দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তারা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের। দলীয় কর্মীদের শাস্তি দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ, নাসিরনগরের ঘটনা কারা ঘটিয়েছে- সেটি তারা দলীয় লোকদের শাস্তি দিয়ে জনসম্মুখে এর স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। হাফিজ বলেন, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ আমাদের জানিয়েছেন, তাদের প্রতিবেশি মুসলিম পরিবার এসে মন্দির ভাঙার কাজে বাঁধা দিয়েছেন এবং ঘটনার সময় আশ্রয় চাইলে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন-এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।নাসিরনগরে হামলায় আওয়ামী লীগ জড়িত অভিযোগ করে হাফিজ বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচিত না হলেও তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই যে, নাসিরনগরের ঘটনাটি কারা ঘটিয়েছেন, তাদের দলীয় নেতাদের শাস্তি দিয়ে তাদের স্বরূপ জনসমক্ষে উন্মোচিত করেছেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, নাসিরনগর সদরের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আরও দুজন আওয়ামী লীগ নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে কারা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মূল হোতা। গত সাত বছরে যে সব ঘটনা ঘটেছে তাতে আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত রয়েছে।নাসির নগরের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনের জন্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনরে দাবি জানান হাফিজ। হাফিজ বলেন, নাসির নগরে প্রথম হামলার ঘটনা অনাকাঙ্খিত বলা যেতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে ৬টি বাড়িতে নতুন করে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন, হামলা হয়েছে একটার দিকে আর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে বিকেল ৫টার দিকে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত। তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি দেশের সব জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের রক্ষায় মুসলমানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।