বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে ৩০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এফবি সুখতারা নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ১৮ জেলেসহ ডুবে গেছে। এ ছাড়া এফবি নুরভানু, এফবি মায়ের দোয়া, এফবি মা-বাবা, এফবি রথিজিৎ এবং এফবি আছিয়া নামের পাঁচটি ট্রলার ৯২ জেলেসহ নিখোঁজ রয়েছে।এদিকে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আগামীকাল রবিবার সকাল নাগাদ বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।শনিবার বেলা ২টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এর ফলে উপকূলের দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কুয়াকাটা, আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও ট্রলার মালিক আনছার মোল্লা জানান, অশনিবার সকালে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের তা-বে মহিপুরের কাদের মাঝির এফবি সুখতারা ট্রলারটি ১৮ জেলেসহ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলারের কয়েকজন জেলেকে উদ্ধার করেন পাথরঘাটার একটি ট্রলারের জেলেরা। এ ছাড়া আলিপুরের ইউসুফ কম্পানির এফবি নুরভানু ট্রলারটি ১৮ জেলেসহ এবং রতন কম্পানির এফবি মায়ের দোয়া নামের ট্রলারটি ১৪ জেলেসহ নিখোঁজ রয়েছে।সমুদ্র উত্তাল থাকায় সাগর থেকে সকল মাছ ধরার ট্রলার মহিপুরের শিববাড়িয়া নদসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে আশ্রয় নিয়েছে। মহিপুর মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ফজলু গাজী জানান, মহিপুরের জয়বেদ বাবুর এফবি মা-বাবা নামের ট্রলারটি ২০ জেলে, এফবি রথিজিৎ ট্রলারটি ২০ জেলে এবং আনোয়ার মিয়ার এফবি আছিয়া নামের ট্রলারটি ১৮ জেলেসহ নিখোঁজ রয়েছে।এদিকে, এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় নিম্নচাপের প্রভাবে দমকা হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সমুদ্র ও সকল নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ সব সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নৌবন্দরে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত ও শীতল হাওয়া বহমান থাকায় ঘর থেকে মানুষ বের হতে পারছে না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহণকারী মানুষের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। এদিকে, ভারি বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় কোথাও কোথাও কৃষকের জমির ধানক্ষেতের ধান গাছ মাটির সাথে মিশে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটা পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থার করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রবিবার সকাল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা যায়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।এদিকে, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সারাদেশের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতি। শনিবার সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মো. গোলাম কিবরিয়া টিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, ‘দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শনিবার দুপুর থেকে ছোট-বড় সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের লঞ্চ চলাচল শুরু হবে।
আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপ ‘নাডা’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।এদিকে গভীর নিম্নচপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।একই সঙ্গে নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার কথাও বলছে আবহাওয়া অধিদফতর। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।