বিশ্ব ইজতেমায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে বিদেশি মেহমান আসার ব্যাপারে ‘ক্লিয়ারেন্স’ পাওয়ার পর তাদের ভিসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।আসন্ন ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সবিচালয়ে এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। আগামী বছর দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হবে ১৫ জানুয়ারি।মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে তবলিগ জামায়াতের সবচেয়ে বড় এই আসরের দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্ব শেষ হবে ২২ জানুয়ারি।বৃহস্পতিবার বিশ্ব ইজতেমায় আগত বিদেশিদের ভিসা সহজীকরণ এবং আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।তিনি বলেন, ইজতেমায় ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে বসানোসহ সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নিরাপত্তা বিষয়ে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি (কমিশনার) নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করবেন।বিদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে ইজতেমায় কেউ আসতে চাইলে তাদের তালিকা আমাদের (মন্ত্রণালয়) পাঠাতে হবে। আমরা ওই তালিকা দেখে ভিসা দেব।গত বছর ৫১তম বিশ্ব ইজতেমায় ১০১টি দেশের প্রায় ২০ হাজার মুসল্লি ইজতেমায় এসেছিলেন জানিয়ে এবছর আরও বেশি বিদেশি মেহমান আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।ইজতেমাকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জঙ্গি হামলার বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। আমরা সবসময় তৎপর এবং সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।ইজতেমায়ও সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। গোয়েন্দা ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমায় থাকবে।
১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমা আয়োজন করা হচ্ছে।রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে প্রথর্ম পর্বে আগামী ১৩-১৫ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্বে ২০-২২ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও শতাধিক দেশ থেকে মুসল্লিরা অংশ নেন।গতবছরও ১০১টি দেশ থেকে ২০ হাজার বিদেশি মেহমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এদের মধ্যে অনেক দেশের মন্ত্রীরাও এসে নির্বিঘেœ চলে গেছেন। এবার আরও বেশি সংখ্যক বিদেশি মেহমান আসতে পারেন।বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের জন্য একটি ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এসবি এবং তাবলিগ জামাতের প্রতিনিধি নিয়ে একটি অভ্যর্থনা ডেস্ক থাকবে।এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশিদের অংশগ্রহণ উপলক্ষে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেন মন্ত্রী।কিছু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে বিদেশি মেহমান আমাদের দেশে তাবলিগ জামাতে যারা আসবেন কর্তৃপক্ষ আগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিস্ট পাঠাবেন, লিস্ট দেখে আমরা তাদেরকে ভিসা দেবো। আমরা সেজন্যই তাবলিগ জামাতের কাছে আবেদন রেখেছি তারা যেন এই সমস্ত দেশ থেকে যারা আসবেন, তারা ক্লিয়ারেন্স দিলে সেই লিস্ট আমাদেরকে দিয়ে দেবেন, আমরা সেই অনুযায়ী ভিসা এবং অন্যান্য ব্যবস্থা করবো।পাশাপাশি জঙ্গি হুমকির প্রেক্ষাপটে সতর্ক থাকার কথাও জানান মন্ত্রী।জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে প্রস্তুতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা সব সময় সতর্ক রয়েছি। গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছেন। জঙ্গির হুমকির বিষয়টি মাথায় রয়েছে, তারা (আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী) কাজ করছেন, এবং সাদা পোশাকেও কাজ করবেন।বিশ্ব ইজতেমা সবার জন্য নির্বিঘœ করার এবং তারা যেন নির্বিঘেœ ফিরে যেতে পারেন সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো এবার নিরাপত্তার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। ওয়াচ টাওয়ার, সিসি টিভি, গোয়েন্দা নজরদারি, পুলিশ-র্যাব এবং অন্যান নিরাপত্তা বাহিনীর টহল থাকবে, সব কিছুই নজরদারিতে থাকবে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি মাঝে মধ্যে বসে সার্বিক বিষয়ে কাজ করবে। এছাড়া পুলিশের নেতৃত্বে একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবে, সিসি টিভি ক্যামেরায় সমস্ত ইনফরমেশন সেখানে আসবে।তিনি বলেন, ইজতেমা মাঠসহ আশেপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক গোয়েন্দা এবং সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। সব প্রবেশপথ ও কৌশলগত স্থানে আর্চওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, সিসি টিভি, ভিডিও ক্যামেরা থাকবে।মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক এবং আশেপাশের সড়কে যানজট নিরসনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, রেসকিউ টিম সব সময় থাকবে। মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন ও বাস রাখা হবে। যাতে সারাদেশ থেকে মুসল্লিরা আসা-যাওয়া করতে পারেন। দু’দফায় বেতার ও টিভিতে বিশ্ব ইজতেমার বয়ান সম্প্রচার করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরবর্তী সভা গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে দল বেঁধে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি দেখছেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।গত ৩০ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওসির উপস্থিতিতে সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্যের পর ওই হামলা হয়েছিল। এতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।অভিযোগের মুখে ওসি আব্দুল কাদেরকে নাসিরনগর থেকে সরিয়ে আনলেও তারও বড় ধরনের ব্যর্থতা ছিল না বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ঠেকাতে পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আমরা দেখেছি, আমাদের কোনো গ্যাপ ছিল না।তারও (ওসি) কোনো গ্যাপ ছিল না। তারপরও আমরা মনে করেছি সে (ওসি) আরেকটু তৎপর হতে পারতো। সেজন্য আমরা তাকে প্রত্যাহার করেছি।ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যে সমাবেশের পর হামলা হয়েছিল, তাতে ওসি কাদের ও ইউএনও চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদও বক্তব্যত রাখেন।মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার খবর শুনে র্যাযব গেলেও বাহিনীর কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন বলেছিলেন, তার বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হওয়ার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এই ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গঠন করা তদন্ত দল বৃহস্পতিবার সকালে নাসিরনগরে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাখাওয়াত হোসেন। জেলা পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট তিনটি কমিটি কাজ করছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটেছে, আপনারা (সাংবাদিক) সবকিছু জানেন, কেন ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে এবং কী কী ঘটনা ঘটেছে।আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব টিম পাঠিয়েছেন এবং অ্যাসেস করেছেন কোথায় কার মাধ্যমে এগুলো সংঘটিত হয়েছে, কে কে এবং কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গাজীপুরের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক, পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এবং বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপিস্থিত ছিলেন।