%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a6%bf-%e0%a6%a4%e0%a7%88%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%a8

মেহেদী হাসান মিরাজ এখন বড় তারকা। দেশের গর্ব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই তিনি নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বে। কিন্তু এত কিছুর পরেও খুলনার খালিশপুরের দক্ষিণ কাশিপুর এলাকায় ছোট্ট ভাড়া বাড়িটায় তাঁর বাস, সেখানেই মা-বাবা আর ছোট বোনকে নিয়ে সাজানো-গোছানো সুখের সংসার।

খালিশপুরে টিনের চালের সেই বাড়িতে সুখ থাকলেও হয়তো স্বাচ্ছন্দ্য নেই। সে বাড়ি গ্রীষ্মের চড়া রোদে তেতে ওঠে, বৃষ্টি হলেই উঠোনে জমে যায় প্যাঁচ প্যাঁচে কাদা। দেশকে এত বড় গৌরব এনে দিলেন যিনি, তাঁর ও তাঁর পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মিরাজ ও তাঁর পরিবারের জন্য একটি পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য একটি উপযুক্ত স্থান খুঁজে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে।এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ খুলনার জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।বাড়ি তৈরির জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজে পাওয়া গেলেই এই তরুণ তারকার পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হবে।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে চমক দেখিয়ে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় আসা ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজের পরিবারের জন্য খুলনায় বাড়ি বানিয়ে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাড়ি তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে তিনি খুলনার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম জানিয়েছেন।মিরাজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পিছনে দারিদ্র্যের সঙ্গে তার লড়াইয়ের গল্প সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার পর প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিলেন।

আশরাফুল আলম বলেন, ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজের পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনা ইতোমধ্যে খুলনার জেলা প্রশাসককে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। বাড়ি করার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করে এই ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।১৯ বছর বয়সী তরুণ অলরাউন্ডার মিরাজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টেই অভিষিক্ত হন। দুই টেস্টে ১৯টি উইকেট নিয়ে এই অফ স্পিনার হয়েছেন ম্যান অফ দি সিরিজ। তার কৃতিত্বেই দ্বিতীয় টেস্ট জয় পায় বাংলাদেশ, ১-১ সমতায় শেষ হয় টেস্ট সিরিজ।

খুলনার খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কের নর্থ জোনের ৭ নম্বর প্লটে বৃহত্তর বরিশাল কল্যাণ সমিতির অফিসের পিছনে যে টিনের বাসায় মিরাজরা থাকেন, সেখানে ঘর মাত্র দুটি। বাঁশের চাটাই দিয়ে বারান্দার একটি অংশ ঢেকে তৈরি হয়েছে আরেকটি ঘর। তারই এক ঘরে রাখা হয়েছে মিরাজের পাওয়া সারি সারি মেডেল।গণমাধ্যমে আসা খবরে বলা হচ্ছে, ওই বাসায় ঢোকার গলি এতোই সরু যে সেখানে রিকশা যেতে পারে না। মিরাজকে শুভেচ্ছা জানাতে হঠাৎ অতিথি বেড়ে যাওয়ায় তাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে রাস্তার পাশে চেয়ার পেতে। অভিষেকেই তারকা খ্যাতি পাওয়া ক্রিকেটারের বাবা জালাল হোসেন রেন্ট-এ কারের মাইক্রোবাস চালক। তার ছোট মেয়ে খুলনার একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। আর ছেলে মিরাজ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে এ বছরই।

মিরাজের এখন খুলনার বাড়িতে। দুইদিন ধওে সে এখানে কিন্তু মিরাজ চাননি তাঁকে নিয়ে বেশি মাতামাতি হোক। কদিন পর আবার ক্রিকেটের ব্যস্ততা। বিপিএলের আগে মনটা সতেজ, চনমনে করতে মাত্র এক দিনের জন্য খুলনার খালিশপুরের বাসায় ঘুরে আসতে চেয়েছেন। কাল সকালে তাঁর কাছে রওনা হওয়ার সময়টা জানতেই অনুরোধ করেছিলেন, ‘বাড়ি যাচ্ছি, কাউকে বলবেন না প্লিজ।

সংক্ষিপ্ত সফরটা নিরিবিলি ও নিজের মতো করেই কাটাতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু তা কি আর হয়! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে রেকর্ড ১৯ উইকেট পেয়েছেন। বিস্ময়-বালকের প্রতি মানুষের তুমুল আগ্রহ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। হলোও তাই। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে খুলনার খালিশপুরের নতুন রাস্তার মোড়Ñমিরাজকে এগোতে হয়েছে মানুষের ভিড় ঠেলেই। কেউ জড়িয়ে ধরে, কেউ সেলফি তোলে, কেউ এক পলক দেখেই খুশি। এ কান-ও কান হয়ে খুলনায় ছড়িয়ে পড়ে মিরাজ এসেছেন। রাতে তাঁদের বাড়ির ছোট্ট উঠানের মতো জায়গাটায় লোকে লোকারণ্য।

মিরাজের বাবা জালাল তালুকদার মানুষকে আতিথেয়তা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। ছোট বোন রুমানা আক্তার বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে দেখেন, তাঁর ভাইকে নিয়ে সবার কী মাতামাতি, কী হইচই! যশোর বিমানবন্দরে এই দুজনই গিয়েছিলেন মিরাজকে বরণ করে নিতে। সেখানে আরেক অপার্থিব দৃশ্য। দুজনই তাঁকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না। মিরাজ যেন অপ্রস্তুতই ছিলেন অদ্ভুত সুন্দর এই দৃশ্যের জন্য। মাঠের পারফরম্যান্সে যেমন তাঁর পরিপক্বতার ছাপ, এখানেও তাই। বাবা-বোনকে সামলে দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়েন।

মিরাজের জন্য ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরাটা নিশ্চয়ই নতুন নয়। গত ফেব্র“য়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষে যখন খুলনায় ফিরলেন, তখনো বেশ হইচই হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। তবে এবারের তুলনায় সেটির সঙ্গে কিছুতেই নয়। আসার খবর তেমন কাউকে জানাননি, তবু মানুষের ভিড় লেগে আছে বাড়িতে। অবশ্য এই ভিড়ভাট্টা মোটেও যন্ত্রণা মনে করছেন না মিরাজ, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফেরার পরও বেশ ভিড় হয়েছিল। তবে এবার আগেরগুলো ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় দলে খেলার গুরুত্বই আলাদা। বাংলাদেশে ভালো খেলেছে, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি বলেই মানুষের এত আগ্রহ।

গত কয়েকদিনে মিরাজের বাড়িতে মানুষ আসতেই থাকে। এই সময় হঠাৎ লোডশেডিং। অন্ধকারে ডুবে যায় মিরাজদের দুই রুমের বাড়িটা। অগত্যা তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়।আজ নিশ্চিত বিরাট হ্যাপাই পোহাতে হবে তাঁকে। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর বাড়ি ফেরার খবরটা গোপন রাখা যায়নি। মোস্তাফিজের ভাষায়, ‘মানুষের ভিড় কাকে বলে’ মিরাজ বুঝবেন! অকপট, স্বার্থহীন যে ভালোবাসা, তাকে কি বাঁধ দিয়ে রোখা যায়?