ভোগান্তি কমিয়ে পুলিশকে জনবান্ধব করে তুলতে বাহিনীর কার্যক্রম মনিটরের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, শুধু প্রভাবশালী নয়, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। বুধবার রাজধানীতে দুদক কার্যালয়ে কমিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দুদকের মামলায় সরকারদলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদির সাজা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আদালতের রায়ের বিষয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তবে আমরা প্রতিটি মামলাতেই চাই, আসামির সাজা হোক।চলতি বছরের ১৪ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করল কমিশন। যদিও এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কমিশন কথা বলেছে। দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির ঘটনায় করা ৫৬ মামলার তদন্ত সাড়ে ১৩ মাসেও শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটি একটি জটিল মামলা। আমরা এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। তবে এটাও সত্যি, আমাদের লোকজনের সক্ষমতার অভাব রয়েছে।এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া কমিশনের ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে।গত ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা বার্ষিক প্রতিবেদনের বিষয়ে জানাতেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুদক চেয়ারম্যান।
পুলিশের বিষয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এগুলো দীর্ঘদিনের অভিযোগ। আমরা পুলিশের কার্যক্রম মনিটর করতে একটি স্বাধীন জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছি। আমরা মনে করি, এটা করতে পারলে পুলিশ আরও অধিক জনবান্ধব হবে এবং মানুষ আরও বেশি সেবা পাবে।তিনি জানান, বার্ষিক প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি সেবা, নিয়োগ, ক্রয় কার্যক্রম, নির্মাণ/ মেরামত/ সংস্কার, এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়েও বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশের কার্যক্রম কার্যক্রম মনিটর করতে ক্রিমিনাল জাস্টিস কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলার তদন্ত ও বিচারের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া এবং দেওয়ানী কার্যবিধিতে মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।ইকবাল মাহমুদ বলেন, পুলিশের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রবলেম সলভ করেন। আমরা মনে করি তাদের কার্যক্রম যদি একটি ইন্ডিপেনডেন্ট মনিটরিংয়ের আওতায় আনা যায় তাহলে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকে। দেশে সার্বিকভাবে দুর্নীতি কমেছে বলে দাবি করেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে দেশে দুর্নীতি কমেছে। এবছর আমাদের জিডিপির গ্রোথ সাত এর উপরে। একটি সাধারণ সূত্র হচ্ছে দুর্নীতি যদি কমে তাহলে (জিডিপি) গ্রোথ বাড়ে এবং দুর্নীতি বাড়লে গ্রোথ কমে।
দুদক চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ আগে দুর্নীতির মামলায় ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সাজার রায় আসে।দুই বছর আগে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ঢাকার একটি আদালত কক্সবাজারের এই সাংসদকে তিন বছরের কারাদ- ও দশ লাখ টাকা জরিমানা করে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের সক্ষমতার অভাব আছে, কাজে গাফিলতিও আছে, তারপরও কমিশন তার কাজ করে যাচ্ছে।প্রভাবশালীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। যারাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে।দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।