01-11-16-pm_jubo-dibosh-7বাংলাদেশের যুবশক্তি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা দৃশ্যত বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই যুবসমাজ। জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এবারের যুব দিবসের স্লোগান ‘আত্মকর্মী যুবশক্তি, টেকসই উন্নয়নের মূলভিত্তি’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ এখন বৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এখনো কর্মক্ষম বিরাট যুবসমাজ রয়েছে। “আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড যুবশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে। সৃজনশীল, উৎপাদনশীল ব্যাপক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণের বিকল্প নেই। কাজেই যুবশক্তি দেশের প্রাণ এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রার চালিকাশক্তি,” বলেন তিনি।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে ১৯ আগস্ট, ১৯৭২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে কারিগরী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলা কিছু কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী: “কাজ করো, কঠোর পরিশ্রম করো। না হলে বাঁচতে পারবে না। শুধু শুধু বিএ এমএ পাস করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুলে যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, নতুন শিক্ষানীতিতে ভোকেশনাল ট্রেনিংকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে পলিটেকনিকে ভর্তির আসন ছিল ২৫ হাজার। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার করা হয়েছে। ২০১৬ পর্যন্ত সরকারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেয়া ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৯ জনকে ১ হাজার ৪৫৯ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে।

প্রশিক্ষিত যুবদের মধ্যে ২০ লাখ ২১ হাজার ১০৩ জন আত্মকর্মে নিয়োজিত হয়েছে বলে জানান তিনি। দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যুবদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা উদ্বুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষিত বেকারদের অস্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ন্যাশনাল সার্ভিসসহ প্রশিক্ষণগুলোতে অংশ নেয়া ৪০ ভাগই যুব নারী বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে এটি মোট সংখ্যার ৫০ ভাগ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষিত যুবকরা নিজে যেন কিছু করতে পারে, তাই প্রশিক্ষণ শেষে ভাতার সুযোগ রাখা হয়েছে। এবং এরপরও শুধু তাদের জন্য একটি ব্যাংক খোলা হয়েছে, যেখান থেকে জামানত ছাড়াই ২ লক্ষ টাকার ঋণ নিতে পারবে যুবকরা।

বিদেশে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক রয়েছে, যেন প্রয়োজনে জামানত ছাড়াই ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারে। এদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৯টি দেশের ভাষা শিক্ষার জন্য ল্যাব রয়েছে। অন্যান্য ধরণের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। বিদেশে যারা যাবে, কেউ প্রশিক্ষণ ছাড়া যেতে পারবে না। কে, কোথায়, কোন কাজে যাবে সব ব্যাপারে তথ্য রাখছে সরকার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেন কেউ না যায় সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আইসিটি ট্রেনিং ভ্যান রয়েছে। সেখানে বাসের ভেতর রয়েছে ট্রেনিং ল্যাব। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে মাসব্যাপী ট্রেনিং কর্মসূচিতে সেখানে অংশ নিতে পারেন সবাই। যুবসমাজকে প্রধানমন্ত্রী মাদক, জঙ্গিবাদ ও অপরাধ থেকে দূরে থেকে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ও পরিবারের উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশ। তবে এজন্য যুবসমাজের মেধামননের ব্যবহার জরুরি।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের স্বপ্নের বাংলা আবারও সোনার বাংলায় পরিণত হবে। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব, কারণ আমাদের আছে শক্তিশালী যুবসমাজ।…আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মতো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারব। এক্ষেত্রে যুবসমাজ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।”

এছাড়া প্রশিক্ষণ ভাতা ৪০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।