প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগের আগামী দিনের নেতা বলে জানিয়েছেন দলটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে নেতৃত্বে আসতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার মতো হতে চান না জয়।আওয়ামী লীগের নবনির্বাচত সম্পাদকমন্ডলীর প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ওবায়দুল কাদের সভাপতিত্ব করেন।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আনতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন দলের সাধারণ সম্পাদক।এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সুযোগ্য সন্তান ও তার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন আছে, আশা আছে।
জয়কে দলের ভবিষংত নেতা দাবি করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দলের নেতৃত্বে আসার ব্যাপারে তার (সজীব ওয়াজেদ জয়) আগ্রহ, সম্মতির বিষয় আছে। নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়া যায় না। নেত্রী (শেখ হাসিনা) আছেন, তিনিও বিষয়টি দেখবেন। জয় কাউন্সিলর হয়েছিলেন, উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি তো মঞ্চে যেতে চাননি, কাউন্সিলরদের সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলেন। আমরাই তাকে ডেকে, বুঝিয়ে মঞ্চে নিয়ে গেছি। তাকে বক্তৃতা দিতে বলেছি। তিনি বক্তৃতা করতে চাননি, বক্তৃতা করেননি।ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দলের নেতৃত্বের বিষয়ে জয় বলেন, বিদেশে থেকে পদে বসে থাকা ঠিক না। দলের পদে আসার বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের আরেকটি বিষয় বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা হলো- তাকে যেনো বিএনপির তারেক জিয়া বানানো না হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র আমাদের ভবিষ্যত লিডার সজীব ওয়াজেদ জয়। তাকে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন আছে, আশা আছে। তিনি আমাদের ভবিষ্যত লিডার, কিন্তু রাজনীতিতে সরাসরি কমিটিতে আসা, সে ব্যপারে তার আগ্রহের ব্যপারকে গুরুত্ব দিতে হবে।গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা আবারও দলের সভাপতি নির্বাচিত হন, ওবায়দুল কাদের পান সাধারণ সম্পাদকের পদ। কাউন্সিলে তৃণমূল থেকে আসা নেতারা প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখার প্রত্যাশার কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয় বলেন, বিদেশে থেকে দলীয় পদ রাখা উচিৎ নয়। বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদেরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তৃণমূল নেতাদের দাবি মেনে জয়কে কোনো পদে রাখা হচ্ছে কিনা।
জবাবে সাধারণ সম্পাদক বলেন, জোর করে আপনারা তার ওপর কিছু আরোপ করতে পারেন না। তার নিজের সম্মতিরও ব্যাপার আছে। তিনি আমাদের ভবিষ্যত নেতা। অবশ্যই এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সময় মত… নেত্রী আছেন, তারও সম্মতির বিষয় আছে। তখনই বিবেচনা করা হবে।ওবায়দুল কাদের বলেন, কয়েকদিন আগে কাউন্সিল অধিবেশনে তাকে (জয়) অনেকটা জোর করে মঞ্চে ওঠানো হয়েছে। আমাদের চাপে কাউন্সিলরদের চাপে তিনি মঞ্চে উঠেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন কাউন্সিলরদের ওখানে বসে থাকতে, ওখানে তিনি কমফোর্ট ফিল করেছিলেন।মঞ্চেও আমরা তাকে বলেছি, কমিটিতে থাকেন। তখন তিনি বলেছেন, বিদেশে থেকে দলের পদে থাকা ঠিক হবে না। তাছাড়া উনি বলেছেন, বিএনপির নেতার (তারেক রহমানের দিকে ইংগিত করে) মত আমি হতে চাই না।জেল হত্যা দিবস সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সম্পাদক মন্ডলীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কাদের। তিনি ৩ নভেম্বরের কর্মসূচি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।কাদের বলেন, ওইদিন সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং ৮টায় বনানী কবরস্থানে জাতীয় চার নেতার মধ্েয তিনজনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ করা হবে।একই দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সব দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। চার নেতার মধ্েয এ এইচ এম কামরুজ্জামানের কবর রাজশাহীতে হওয়ায় রাজশাহীতেও কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।ওই দিন বিকাল ৩টায় ঢাকার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে (কেআইবি) জাতীয় চার নেতার স্বরণ সভা হবে বলে জানান কাদের। ওই সভার সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওবায়দুল কাদের জানান, দলের নবনির্বাচিত কমিটি সেদিন সকালে বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের স্মৃতির প্রতিও শ্রদ্ধা জানাবে। অন্যদের মধ্েয যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং কোষাধ্যক্ষ এন এইচ আশিকুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।