photo_02নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ও সহিংস সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে নারী-পুরুষের অংশীদারিত্বমূলক, সহমর্মিতাপূর্ণ, দায়িত্বশীল, সুস্থ সম্পর্কের বিকাশের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে, ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি (সিইপি)’র উদ্যোগে মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব (মেজনিন) কর্মসূচির পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেছেন, যথাযথ আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ও সহিংস সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে নারী-পুরুষের অংশীদারিত্বমূলক, সহমর্মিতাপূর্ণ, দায়িত্বশীল, সুস্থ সম্পর্ক বিকাশের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এ কাজে শিক্ষক, অভিভাবক, গণমাধ্যমকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজসহ সকলকে সম্মিলিত ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে।

মঙ্গলবার মঙ্গল বেলা ১১ টায় পাবনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাকসুদা বেগম সিদ্দীকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতার হোসেন আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান, প্রেসক্লাব সভাপতি বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ প্রফেসর শিবজিত নাগ। সভায় আলোচনা করেন, জেলা শিক্ষা কর্মকত মা. নাসির উদ্দীন, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মোমিন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জোবাইদা খাতুন, বিশিষ্ঠ সাংবাদিক এবিএম ফজলুর রহমান প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, যৌন হয়ানি প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, সাইবার বুলিং ও বাল্যবিয়ে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দরকার। মতবিনিময় সভায় আরো বলেন, যৌন হয়রানি বা উত্ত্যক্তকরণ, সাইবার বুলিংÑএগুলো নারী নির্যাতনের একটি হাতিয়ার। এরফলে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে এবং বাল্যবিয়ের শিকার হন। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, সমাজে ও পরিবারে নারীর প্রতি সম্মানের অভাবের প্রতিফলন হিসেবে যৌন হয়রানি, সাইবার বুলিং সামাজিক ব্যাধি হিসেবে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে নারীর মৌলিক মানবাধিকার যেমন: নারীর শিক্ষার অধিকার, চলাচলের অধিকার সর্বোপরি বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এসব সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গিকার জরুরী হয়ে পড়েছে।

সভায় মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন রীতা রোজলীন কস্তা, কর্মসূচি সমন্বয়কারী, সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি, ব্র্যাক, মেজনিন কর্মসূচি সংক্রান্ত মূল উপস্থাপনা করেন সারা খাতুন, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট ওমেন অ্যান্ড চিলড্রেন, সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি। স্বাগত বক্তব্য দেন মোঃ আলমাছুর রহমান, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি। ব্র্যাকের আঞ্চলিক ব্যবস্তাপক সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির কানিজ ফাতেমসহ শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধি, ব্র্যাক প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মীর সামসুল আলম, সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিষ্ট, সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি।

উল্লেখ্য নারী ও কিশোরীদের প্রতি সব রকম সহিংসতা, যৌন হয়রানি, সাইবাল বুলিং ও বাল্যবিয়ে নির্মূলকরণে ব্র্যাকের সিইপি কর্মসূচি ‘মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব’ বা মেজনিন কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, শিক্ষক, অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় অবস্থান তৈরি এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাবনা জেলার ৩০টি স্কুলসহ আরো ১০ জেলায় ৩০০ স্কুলে কাজ করবে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ে মত বিনিময়ের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।