%e0%a6%a1%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%a6-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a7%8c%e0%a6%a7%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0অপহরণের ২২ দিন পর ফিরে এলেও এখনও ঘোর কাটেনি পল্লবীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রিয়াদ নাসের চৌধুরীর। বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাতে তিনি বাসায় ফেরেন। শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও ঠিকঠাক ঘুম হচ্ছে না তার। এমনকি ২২ দিন অপহৃত থাকলেও তার কাছে তা মনে হচ্ছে দুই দিন। এদিকে অপহরণের পর থেকে কোস্ট গার্ডের লে. কমান্ডার ফরহাদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে রিয়াদের পরিবার। তবে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে এখনও কিছু প্রকাশ করেনি পুলিশ।

শুক্রবার সকালে ডা. রিয়াদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি কিছুটা অসুস্থ হলেও জীবিত ফিরে আসায় বাবা- মা ও দু্ই ভাইসহ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন স্বজনরা। ছয়তলা বাসার লিফটে দেখা হয় রিয়াদের বাবা শাহ আহমেদ নাসেরের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া, আমার ছেলে ফিরে এসেছে।’ ছেলে নিখোঁজ থাকাকালীন যারা সাহায্য করছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ফিরে আসার পর বাসায় মানুষের আনা-গোণা বেড়ে যাওয়ায় ডা. রিয়াদকে চাচার বাসায় বিশ্রামে রাখা হয়েছে বলে জানান তার মেঝো ভাই ফাহাদ নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ও (রিয়াদ) সবার সঙ্গে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ডাক্তারের পরামর্শে ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যদের নির্দশনায় ভাইকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে।’

তিনি জানান, বাসায় আসার পর থেকে পুলিশ ও ডিবি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাকে কোর্টে স্ট্যাটমেন্ট দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্রামের সুযোগ পায়নি। ডা. রিয়াদের বরাত দিয়ে ফাহাদ জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর অপহরণের পর থেকে তাকে ছোট একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। খাবারের সঙ্গে সম্ভবত নেশা জাতীয় কিছু মিশিয়ে দিতো। খাওয়ার পর মাথা ঘুরাতে শুরু করতো, এক পর্যায়ে ঘুমের কোলে ঢলে পড়তো। আবার ঘুম ভাঙার দেখতো, খাবার রাখা আছে। খাবার খেয়ে সমস্যা হচ্ছে বোঝার পরও বাঁচার জন্য খাবার খেতেন বলে জানান তিনি। এভাবে কিভাবে ২১ দিন কেটে গেছে, তা টেরই পাননি ডা. রিয়াদ। এই দিনগুলোতে কারও চেহারা দেখতে পাননি বলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন তিনি।

https://www.youtube.com/watch?v=56emBrcKgLg

গত বুধবার রাতে হাত-মুখ বেঁধে গাড়িতে তোলা হয় রিয়াদকে। একপর্যায়ে বাঁধন খুলে রাস্তার পাশে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটি দোকানে জিজ্ঞেস করে ডা. রিয়াদ জানতে পারেন, তিনি আরিচা রয়েছেন। সেখান থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে পল্লবী আসেন তিনি। তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার সময় জামার বুক পকেটে ১টি ৫০০ ও ১টি ১০০ টাকার নোট গুজে দেয় অপহরণকারীরা। সেই টাকায় অটোরিক্সা ভাড়া করে বাসায় ফেরেন তিনি। আনুমানিক রাত পৌনে ১১টার দিকে বাসার গেটে আাসেন বলে জানান বাসার সিকিউরিটি গার্ড আমিনুর মোল্লা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে উনাকে চিনতে পারিনি। বাবার নাম বললে বাসায় ফোন দেই। তখন বাসা থেকে লোকজন এসে উনাকে নিয়ে যান।’

বাসায় ফিরলে রিয়াদকে গোসল করিয়ে খেতে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি খেতে পারছিলেন না বলে জানান তার মা সায়মা বেগম। তিনি বলেন, ‘ও খেতে চাচ্ছিল, কিন্তু খেতে পারছিল না। সারারাত ঘুমাতেও পারেনি। পরদিন (বৃহস্পতিবার) থেকে খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করে।’ অপহরণকারীরা কেন তাকে অপহরণ করলো, তা বুঝতে পারছেন না রিয়াদের পরিবারের সদস্যরা। মেঝো ভাই ফাহাদ বলেন, ‘টাকার জন্য অপহরণ করলে আমাদের কাছে টাকা চেয়ে ফোন আসতো, কিন্তু এ ধরনের কোনও ফোনই আমাদের কাছে আসেনি। তাকে কোনও ধরনের টর্চারও করেনি। তাহলে কেন অপহরণ করলো আমরা বুঝতে পারছি না। পুলিশ ও ডিবি রিয়াদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা নিশ্চয় কারণ খুঁজে বের করতে পারবে।’

পল্লবী থানার ওসি মো. দাদন ফকির বলেন, ‘আমরা ডা. রিয়াদের সঙ্গে কথা বলেছি। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে তদন্তের কাজ চলছে।’ গত ২৯ সেপ্টেম্বর পল্লবীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রিয়াদ নাসের চৌধুরী অপহৃত হন। ওইদিন বিকেলে সহকর্মী ডা. মো. সালেককে নিয়ে পূরবী সিনেমা হলের পাশে একটি চায়ের দোকানে যান তিনি। তখন পাশেই একটি গাড়িতে থাকা তিনজন এসে রিয়াদ নাসের চৌধুরীর নাম জিজ্ঞেস করে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। প্রথমে যেতে না চাইলে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে রিয়াদ নাসেরকে জোর করে গাড়িতে তুলে মিরপুর-১২ বাসস্যান্ডের দিকে চলে যায়। মাইক্রোবাসটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার (ঢাকা মেট্রো চ-৫৩-১৩৮২)। এ ঘটনায় অপহৃতের ভাই মেধাদ নাসের চৌধুরী পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মেধাদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘ড. লুনা আনিকা নামে রিয়াদের এক বান্ধবী ছিল। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথে পড়ার সময় তাদের বন্ধুত্ব হয়। কিছুদিন আগে লুনার সঙ্গে তার স্বামী কোস্ট গার্ডের লে. কমান্ডার ফরহাদ সরকারের ঝামেলা হয়। আর ফরহাদ সরকার এর জন্য আমার ভাইকে দোষারোপ করে। বিভিন্নভাবে আমার ভাইকে ভয় দেখানো হয়। এ ছাড়া আর কোনও ঝামেলা নেই।’

Video : somoynews