sheikh-hasina

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ‘হতাশ হলেও’ ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসার পেছনে ভারত ও বাংলাদেশের কারণ ভিন্ন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আমরা যে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা পাকিস্তানের পরিস্থিতির কারণে।(পাকিস্তান থেকে) সন্ত্রাসবাদ সব জায়গায় ছড়িয়েছে, যে কারণে আমাদের অনেকেই পাকিস্তানের ওপর হতাশ। ভারত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে সরে এসেছে (উরি হামলার) কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কারণটি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন।শুক্রবার ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসীর হামলার পর পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের ভারতীয় অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিবেচনার তফাৎ স্পষ্ট করেন শেখ হাসিনা।

১৫-১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে গণভবনে তার এই সাক্ষাৎকার নেন দ্য হিন্দুর সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার। শেখ হাসিনা বলেন, সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসার পেছনে তার সরকারের কাছে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার ও সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তান সরকারের কঠোর প্রতিক্রিয়া।যুদ্ধের সময় ও পরে ভারতের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের আচরণের কারণে দেশটির সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আমার উপর অনেক চাপ ছিল। কিন্তু আমি বলেছি, সম্পর্ক থাকবে এবং আমাদেরকে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।মূল কথা হলো- আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি, এবং তারা ছিল পরাজিত শক্তি।

তবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর উরির ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশেরই উচিৎ হবে নিয়ন্ত্রণরেখার পবিত্রতা রক্ষা করা, যাতে শান্তি আসে।ওই হামলার পর দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর দাবি করে। তবে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রমের দাবি নাকচ করে দুই পক্ষে গোলাগুলি হয়েছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়।এরপর থেকে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যদের মধ্যে কয়েক দফায় গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে নভেম্বরে সার্ক সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পরে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানও সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ এ সম্মেলন বাতিল হয়। গত দুই দশকে কাশ্মিরে সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী এই হামলা নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও উত্তাপ ছড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। সংকট নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন।

প্রতিবেশী দুই দেশকে সংঘাত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় থাকুক। দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রকম সংঘাত হোক, কোনো রকম উত্তেজনা হোক, সেটা আমরা কখনও চাই না।এই অঞ্চলের এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সংঘাত হলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো: দ্য হিন্দু: ১৯৮০’র দশকে সার্কের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশ।কিন্তু এ বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসা দেশগুলোর একটিও বাংলাদেশ। তাহলে কি সার্কের দিন শেষ?

শেখ হাসিনা: না, আমরা আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছি, সার্ক অঞ্চলের বিরাজমান পরিস্থিতি সম্মেলন অনুষ্ঠানের উপযোগী নয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আমাদের কিছু স্পর্শকাতরতা আছে, যেখানে পাকিস্তান আমাদের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়েছে, এমনকি বিষয়টি তাদের সংসদেও তুলেছে। অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। যেহেতু এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়, সেহেতু আমরা এতে মর্মাহত হয়েছি। আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, এটা নিয়ে তাদের ভাবার কথা নয়। পাকিস্তানের এ ধরনের আচরণের কারণে দেশটির সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমার ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি সম্পর্ক থাকবে এবং আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। তবে মোদ্দা কথা হলো, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তি যুদ্ধে জয় পেয়েছি এবং তারা ছিল পরাজিত শক্তি। আমরা যুদ্ধে জিতেছি এবং তাদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করেছি এবং এটা প্রত্যাশিত যে তারা এটা ভালোভাবে নেবে না।

দ্য হিন্দু: পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত হওয়া সন্ত্রাসবাদ কী আপনার সামনে প্রধান সমস্যা নয়? বাস্তবে, উরি হামলার পর একই সময়ে বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান ও ভারতের সার্ক সম্মেলন বর্জন করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে একঘরে করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।শেখ হাসিনা: পাকিস্তানের পরিস্থিতির কারণে আমরা সার্ক সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে সন্ত্রাসবাদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। এবং ওই সন্ত্রাসবাদ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, যে কারণে আমরা অনেকে পাকিস্তানের ওপর হতাশ। ভারত ও পাকিস্তানেরও দ্বিপাক্ষীয় সমস্যা রয়েছে এবং আমি সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। ভারত (উরির হামলার কারণে) সার্ক বর্জন করেছে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য কারণটা সম্পূর্ণই ভিন্ন।

দ্য হিন্দু: সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতের অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত আপনি সমর্থন করেন? শেখ হাসিনা: আমি মনে করি, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) অলঙ্ঘনীয়তা মেনে চলা উচিত, যা শান্তি নিয়ে আসবে।দ্য হিন্দু: কিন্তু আপনি কি এ নীতি সমর্থন করেন? গত বছর সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে ঢুকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার (ভারত)। একই ধরনের কর্মকা- বাংলাদেশে হলে আপনি কি সমর্থন করবেন?

শেখ হাসিনা: আমার মনে হয়,এই প্রশ্নটি আপনার দেশের সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে করা উচিত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এসব সীমানা, নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলা উচিত।দ্য হিন্দু: আপনাকে প্রশ্নটা করছি কারণ, ২০০৯ সালে আপনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপনার সরকারের সাঁড়াশি অভিযান: জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা ও ২০ জনেরও বেশি শীর্ষ সন্ত্রাসীকে হস্তান্তর। সেই সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার এখন কী অর্থ? শেখ হাসিনা: আমি মনে করি, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের শেকড় গজাতে দেওয়া যাবে না। সেটা ভারত হোক, বা মিয়ানমার, যাদের সঙ্গেই আমাদের সীমানা রয়েছে… ২০০৮ সাল থেকে পদক্ষেপ নিয়ে আসছি, তার ফলও দেখছেন। আমাদের সীমান্তজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই সহিংসতা, বোমা বিস্ফোরণ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলতো এবং আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। অন্য কোনো দেশে জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য কোনও গোষ্ঠীকে আমরা আমাদের মাটি ব্যবহার করতে দেব না। বাংলাদেশ আর সন্ত্রাসপাচারকারী দেশ নয় বা আগের অস্ত্র পাচারের জন্য সিল্ক রুটও নয়, যা আগে ছিল।