সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করাকে উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফরাসি সংবাদমাধ্যম টিএফ১ টিভি-কে পুতিন জানান, বেসামরিক মানুষজনের মাঝে লুকিয়ে থাকলেও রাশিয়া সন্ত্রাসীদের ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসীদের সাধারণ মানুষজনকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পুরো বিশ্বকে ব্ল্যাকমেইল করতে দিতে পারি না।’
বেসামরিক এলাকায় রুশ বিমান হামলা চালানোয় যুদ্ধাপরাধ হয়েছে, মার্কিনো ইউরোপীয় নেতাদের এমন দাবি প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘এসবই রাজনৈতিক উসকানিমূলক কথা-বার্তা, যার তেমন কোনও গুরুত্ব নেই।’ সিরিয়ার বাস্তবতা না বুঝেই এসব বক্তব্য দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। পশ্চিমাদের সমালোচনায় পুতিন আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রথমত দায়ী আমাদের পশ্চিমা অংশীদাররা আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।’
এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওলাঁদ আলেপ্পোতে রুশ বিমান হামলায় যুদ্ধাপরাধ হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন। তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে এর বিচারও দাবি করেন। এরপরই পুতিন তার ফ্রান্স সফর স্থগিত করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। রাশিয়া অবশ্য এসব দাবি আগে থেকেই খারিজ করে আসছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভিটালি চুরকিনও এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযোগ, তারা আল-কায়েদা সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করছে। এদিকে, এর মধ্যেই সিরিয়া প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে রুশ কর্তৃপক্ষ। শনিবার সুইজারল্যান্ডের লুসানে অনুষ্ঠেয় ওই আলোচনায় আরও অংশ নেবে সৌদি আরব ও তুরস্ক। এতে কাতারও যোগ দিতে পারে বলে জানা গেছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ায় কয়েক বছর ধরে চলে আসা সহিংসতা বন্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদের ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়া এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর অস্ত্রবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেয়, যা কার্যকর হয় ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। কিন্তু অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর থেকেই উভয় পক্ষ থেকেই তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। এক পর্যায়ে ওই অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভেঙে যায়। সিরিয়ান অবজারভেটরি তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ সূত্রে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে চার লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। এর আগে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর খবরে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৮ মার্চ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তারা তিন লাখ ১ হাজার ৭৮১ জনের প্রাণহানি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হবে বলে দাবি করেছেন তারা। সিরিয়ান অবজারভেটরি বলছে, ওই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা চার লাখ ৩০ হাজারের কাছাকাছি হবে।
সিরিয়ার চলমান সংকট নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতমুখী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তারা আসাদ সরকারের বিদ্রোহ ঘোষণাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহযোগিতা করছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলার নামে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। আর রাশিয়া বাশার আল-আসাদকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা আসাদ সরকারের সমর্থনে আইএস ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে মার্কিন-রুশ ‘ছায়াযুদ্ধ’ বলেও মনে করছেন অনেকে।
সূত্র: বিবিসি।