নিউ জেএমবির আরও অন্তত ৩৪ দুর্ধর্ষ জঙ্গির তালিকা করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এরা সবাই আত্মঘাতী ও সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বেশিরভাগ জঙ্গি সদস্য ছদ্মনামে আত্মগোপনে আছে। গোয়েন্দারা যাদের সম্ভাব্য অবস্থান চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে ঢাকার কয়েকটি উপকণ্ঠ ও সীমান্তবর্তী জেলার নাম এসেছে। ইতিমধ্যে ভারতে পালিয়ে গেছে চারজন। আর সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছে কয়েক জঙ্গি। পুলিশ ও র্যাবের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, নিউ জেএমবির আত্মঘাতী ও সাংগঠনিক সেলের সদস্যদের কেউ কেউ সম্ভাব্য আস্তানায় আত্মগোপনে আছে। এদের মধ্যে কারও ছদ্মনাম (কোড নেম) ও কারও পুরো নাম-ঠিকানাও জানা গেছে। কিন্তু এরা তাদের অবস্থান বারবার পাল্টাচ্ছে। তিনি আরও জানান, কেউ কেউ আইনশৃংখলা বাহিনীর চতুর্মুখী অভিযানের ফলে সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের গোয়েন্দারা সেই সম্ভাব্য সীমান্ত এলাকাও চিহ্নিত করায় তারা পালাতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর অব্যাহত অভিযানের মুখে আট অভিযানে ৩২ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে পাঁচজন, শোলাকিয়ায় দু’জন, কল্যাণপুরের আস্তানায় নয়জন, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তিনজন, রূপনগরে একজন, আজিমপুরে একজন এবং সর্বশেষ শনিবারের অভিযানে গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে ১১ জঙ্গি নিহত হয়। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পরই আইনশৃংখলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে নিউ জেএমবির একাংশের প্রধান ও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী এবং সংগঠনের সামরিক প্রশিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলামসহ দুর্ষর্ষ জঙ্গিরা মারা যায়। এছাড়া বিভিন্ন আস্তানা থেকে ল্যাপটপ, কার্ড রিডার, সিমকার্ড ও পেনড্রাইভে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। একই সঙ্গে আটক জঙ্গিরাও জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই চলছে একের পর এক আস্তানায় অভিযান। মিলছে নতুন নতুন জঙ্গির নাম।
জানা গেছে, গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনার পর যেসব জঙ্গির নাম আসে, তাদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন গোয়েন্দারা। এতে কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানার সঙ্গে জড়িত নিউ জেএমবির সাংগঠনিক পর্যায়ের কমান্ডারদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসে। ওই আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের কাছে এসব তথ্য পাওয়া যায়। একই সঙ্গে শোলাকিয়া হামলার ঘটনার পর নিহত জঙ্গি শফিউল আলম ডন, ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাহাবুদ্দিন রকি এবং গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড নিহত তামিমের গোপন বার্তাবাহক সালাহউদ্দিন কামরান নিউ জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও আত্মঘাতী জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্য দেয়। এতে ৩৪ জনের নাম আসে। এরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আছে।
জঙ্গিদের দেয়া তথ্যে যাদের নাম জানা যায় তারা হল- নিউ জেএমবির কমান্ডার ও সারা দেশের সমন্বয়ক মানিক, গুলশান হামলার সমন্বয়ক কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান, বাদল মিয়া, আজাদুল কবিরাজ, আবদুল খালেক, শরিফুল ইসলাম খালিদ (ভারতে), মামুনুর রশিদ রিপন (ভারতে), আবদুস সাকিব ওরফে মাস্টার সাকিব, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, মাসুদ, অভি, সাব্বির, আতিক, মোত্তামিন, তাপস, সোহাগ, ইমরান, হাসান, মিজান, সাদ্দাম ওরফে রাহুল, বিপ্লব ওরফে আনসারী, গোলাম রব্বানী, হিমেল, নিউ জেএমবির ডাকাত দলের প্রধান আজওয়াদ আবদুল্লাহ ওরফে আসিফ আজওয়াদ, আবু ইউসুফ মোহাম্মদ বাঙালি, প্রযুক্তিবিষয়ক সমন্বয়ক বাশারুল্লাহ ওরফে চকলেট ওরফে শান্ত, কমান্ডার ইকবাল হোসেন, মামুন, জুনায়েদ হাসান খান, ইব্রাহিম হাসান খান, নারায়ণগঞ্জে নিহত জঙ্গি তাওসীফ গ্র“পের সদস্য রিয়াজ ওরফে কাচ্চি, সালভি আলী ওরফে মালাভী, ইয়াসিন তালুকদার, গালিব ও পুরনো জেএমবির শূরা সদস্য হাতকাটা সোহেল ওরফে ভাগিনা সোহেল।
পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, তালিকায় নাম আসা জঙ্গিদের সবাই ভয়ংকর প্রকৃতির। এরা নিউ জেএমবির সামরিক ও অপারেশনাল শাখার কমান্ডার। রয়েছে আর্থিক খাত দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও নতুন জঙ্গি রিক্রুুটকারীদের প্রশিক্ষকও। কেউ কেউ আবার উচ্চ শিক্ষিত জঙ্গিও।