প্রথম ওয়ানডেতে শেষের ভুলে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হয়। সিরিজ বাঁচানোর মিশনে ইংল্যান্ডকে ৩৪ রানে হারিয়ে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৭৫ ও মাশরাফি বিন মর্তুজার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে (২৯ বলে ৪৪) ২৩৮ রানের জবাবে ৫.২ ওভার বাকি থাকতেই ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশদের ইনিংস। আগামী বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দু’দল।
২৬ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে টেনে তোলেন জস বাটলার ও জনি বেয়ারস্টো। দু’জন মিলে যোগ করেন ৭৯। শেষের দিকে উইলি-রশিদের নবম উইকেট জুটিতে ২৭ ও দশম উইকেটে জেক বলকে (২৮) নিয়ে ৪৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন আদিল রশিদ। ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন এ লেগস্পিনার। চতুর্থ ওভারে ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মোসাদ্দেক হোসেনের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন জেমস ভিঞ্চ (৫)। পরের ওভারেই সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘূর্ণিতে ক্লিন বোল্ড হন আগের ম্যাচে অভিষেকেই অর্ধশতক হাঁকানো বেন ডাকেট (০)। অষ্টম ওভারে ওপেনার জেসন রয়কে (১৩) নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন মাশরাফি। দুই ওভার না যেতেই আবারো ‘ম্যাশ অ্যাটাক’। এবার আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বেন স্টোকসের (০) স্ট্যাম্প ভাঙেন মাশরাফি।
কিন্তু পঞ্চম উইকেট জুটিতে দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন জস বাটলার ও জনি বেয়ারস্টো। ২৪তম ওভারে এসে দু’জনের ৭৯ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ব্যক্তিগত ৩৫ রানে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বেয়ারস্টো। তিন ওভার না যেতেই মঈন আলিকে (৪) সাকিবের তালুবন্দি করেন একাদশে ফেরা নাসির হোসেন। এরপর অধিনায়ক জস বাটলারের বিদায়ে হারের শঙ্কার সামনে পড়ে সফরকারীরা। ইংলিশ দলপতি করেন ৫৭ বলে ৫৭ রান। তার ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার। ইনিংসের ২৮তম ওভারে বাটলারকে এলবিডব্লু’র ফাঁদে ফেলেন তাসকিন। এক ওভার পর আবারো বোলিংয়ে ফেরেন তাসকিন। ফিরেই ক্রিস ওকসকে বিদায় করেন। ব্যক্তিগত ৭ রান করে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন ওকস। ইনিংসের ৩৯তম ও নিজের প্রথম ওভারেই ডেভিড উইলিকে ফিরিয়ে (৯) নবম উইকেটের পতন ঘটান মোসাদ্দেক হোসেন। ব্যাট হাতে ঝড় তোলা মাশরাফি বোলিংয়েও ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের সামনে ‘অগ্নিমূর্তি’ ধারণ করেন। একাই তুলে নেন চারটি উইকেট। তিনবার উইকেট উদযাপনে মাতেন তাসকিন। একটি করে নেন সাকিব, নাসির ও মোসাদ্দেক।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববারের ম্যাচটিতে (৯ অক্টোবর) টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ দলপতি জস বাটলার। দুপুর আড়াইটায় খেলা শুরু হয়। বাংলাদেশের সেরা ওপেনার ১৫৮ ওয়ানডে খেলা তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটি গড়তে নামেন ৬১ ওয়ানডে খেলা ইমরুল কায়েস। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরির পর ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও শতক হাঁকান ইনফর্ম ব্যাটসম্যান ইমরুল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৪৬ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম-ইমরুল। তামিম ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফিরে গেলেও ১১২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন ইমরুল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সতর্ক থেকেই শুরু করে এই জুটি। তবে, ইনিংসের সপ্তম ওভারে ক্রিস ওকসের করা পঞ্চম বলে টপ এজ হয়ে উইলির হাতে ধরা পড়েন ইমরুল। ফিরে যাবার আগে দুটি চারের সাহায্যে ১৮ বলে ১১ রান করেন তিনি।
দলীয় ২৫ রানের মাথায় ওপেনার ইমরুল ফিরে গেলে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়তে নামেন ২৮ ওয়ানডে খেলা সাব্বির রহমান। ইনিংসের নবম ওভারে ক্রিস ওকসের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরে ফেরেন তামিম। শর্ট বল মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মঈন আলির হাতে ধরা পড়েন ৩১ বলে ১৪ রান করা তামিম। দুই ওপেনার তামিম-ইমরুল ফিরে যাবার পর উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাব্বির রহমান এবং ১৩০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে, প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সাব্বির। প্রথম ম্যাচে ১৮ রান করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৩ রান। ইনিংসের ১৪তম ওভারে ইংলিশদের প্রথম ম্যাচের নায়ক জ্যাক বলের শিকারে বোল্ড হন ২১ বলে ৩ রান করা সাব্বির।
প্রথম ওয়ানডের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ মুশফিকুর রহিম! যদিও এ ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে চার হাজারি রানের ক্লাবে প্রবেশ করেন তিনি। জ্যাক বলের করা ২২তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ২১ রানে মঈন আলীর হাতে ধরা পড়েন। তার আগে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ।
মুশফিকুর রহিমের পর সাকিব আল হাসানের বিদায়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। বেন স্টোকসের বলে জস বাটলারের গ্লাভসবন্দি হন সাকিব (৩)। এর আগে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় টাইগারদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে। উইকেট আগলে রেখে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখানো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যক্তিগত ৭৫ রানে বিদায় নেন। ইনিংসের ৪০তম ওভারে তিনি সাজঘরে ফেরেন। বেন স্টোকসের বলে চার হাঁকিয়ে ৫১ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান মাহমুদউল্লাহ। এটি তার ওয়ানডেতে ষোড়শ অর্ধশতক। ৮৮ বলে সাজানো তার ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারির মার।
এরপর বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন (২৯)। ইনিংসের ৪২তম ওভারে আদিল রশিদের বলে মঈন আলির হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়া টাইগারদের নতুন এই তারকা ৪৯ বল মোকাবেলা করে চারটি বাউন্ডারি হাঁকান। এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তোলের টাইগার দলপতি মাশরাফি। ম্যাশের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে তার ২৯ বলের ইনিংসে দুটি চার আর তিনটি ছক্কার মার ছিল। নাসির হোসেন ২৭ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। ইংলিশ বোলারদের মধ্যে দু’টি করে উইকেট নেন ক্রিস উকস, আদিল রশিদ ও জেক বল। বাকি উইকেটটি নেন বেন স্টোকস। ইনিংসের শেষ ওভারে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মাশরাফি।