রূপপুরে ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাশিয়ারূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এর অংশ হিসেবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বর্জ্য রাশিয়া ফেরত নেবে না এমন ধরনের একটি বিভ্রান্তি ছড়ানো শুরু হয়। অথচ বিষয়টি ২০১১ সালেই চূড়ান্ত হয়ে আছে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাশিয়া এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সকল বর্জ্য ফিরিয়ে নেবে।

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সকল সিদ্ধান্ত হয়ে আছে মস্কোয় অনুষ্ঠিত হাসিনা-পুতিন শীর্ষ বৈঠকে। ওই বৈঠকেই বহু প্রতীক্ষিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সকল পর্যায়ের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনার বিষয় চূড়ান্ত করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কেবল দুই দেশের শীর্ষ দুই নেতার মৌখিক সম্মতিই নয়, বিষয়টি চূড়ান্ত হয় ২০১১ সালে করা দুই দেশের ‘ইন্টার গর্ভমেন্টাল এগ্রিমেন্ট’ (আইজিএ) তে। তবে বিষয়টি বুঝতে না পেরে একটি মহল বিষয়টি নিয়ে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা বাংলাদেশের মতো নবীন দেশের জন্য একটি বড় ঘটনা। এজন্য পর্যায়ক্রমে একের পর এক আলোচনা ও চুক্তি সম্পাদন করার প্রয়োজন হয়। শুরুতেই রূপপুরের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ‘আইজিএ’ স্বাক্ষর হয়েছে। এরপর এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চুক্তি হয়েছে। অর্থায়নের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, ভূমি উন্নয়নের চুক্তি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও চুক্তি হয়েছে। এইভাবে এর জ্বালানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও চুক্তি হবে। চুক্তি হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা ও বিশেষজ্ঞ সহায়তার বিষয়েও। এটাই নিয়ম। সারা পৃথিবীই এভাবে চলছে। আমাদের দেশে বিষয়টি নতুন বলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো সহজ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ইন্টার গর্ভমেন্টাল এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি স্বতন্ত্র চুক্তি হবে। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আগেই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে অলোচনা শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় ঠিক হওয়া বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলেই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। কারণ বিষয়টি হাসিনা-পুতিন বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকলে বাংলাদেশের মতো দেশকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতিই দিতো না ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘আইজিএ’ পুঙ্খানুপুঙ্খু পরীক্ষা করেই ‘আইএইএ’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে অনুমোদন দিয়েছে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পারমাণবিক বর্জ্য বলে যা বোঝানো হচ্ছে তা আসলে পারমাণবিক জ্বালানির ৯০ ভাগ। মাত্র ১০ ভাগই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। এই বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে পুনরায় জ্বালানি তৈরি করা ছাড়াও আণবিক বোমা তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মতো দেশকে আইএইইএ’এই সক্ষমতা এতো তাড়াতাড়ি অর্জন করতে দেবে না। বাংলাদেশও এজন্য তৈরি নয়।

তিনি জানান, এরই মধ্যে চীন ও জাপান বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মৌখিক আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এসব প্রস্তাবনায় ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কেবল একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রই নয়, এটা সক্ষমতা ও জাতির ইমেজের প্রতিফলন। তাই সরকার এটিকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে।