রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সুন্দরবন ধ্বংসের দায়ে ১শ’ বছর পরে হলেও সংশ্লিষ্টরা বিচারের সম্মুখীন হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যপক ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।শুক্রবার সকালে রাজধানীর হোটেল ফার্স-এ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে শত নাগরিক নামে একটি সংগঠন।
শত নাগরিকের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আ ন হ আখতার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, প্রো-ভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সুন্দরবন রক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন ও সঞ্চালনা করেন শত নাগরিকের সদস্য সচিব আব্দুল হাই সিকদার।বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের ক্ষতি হবে- এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন। কিন্তু ক্ষমতায় থাকলে নেতা-নেত্রীর আশপাশে যারা থাকেন, তাদের কাছ থেকে সুপরামর্শ পাওয়া বড় কঠিন হয়ে যায়। তাদের খুব বেশি কানকথা শুনতে হয়। ফলে সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
শত বছর পরেও কিন্তু বিচার হয়- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বহু বছর পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে। আজ যারা সুন্দরবন ধ্বংস করছে, পরবর্তীতে তাদেরও বিচারের সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তখন না আবার জনগণের কাছে করোজোড়ে ক্ষমা চাইতে হয়- সুন্দরবন ধ্বংস করে আমরা অন্যায় করেছি, আমাদের ক্ষমা করে দিন। অনেক সময় আবার সে সুযোগও পাওয়া যায় না।বদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবন সংলগ্ন রামপালে না হয়ে অন্য কোথাও হোক- এমন মতামত ব্যক্ত করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের যে অংশে সুন্দরবন আছে, সেখানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হয়নি। শ্রীলংকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশের সুন্দরবনে কেন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে? -এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে, সবার বিরোধিতা প্রধামন্ত্রীকে আমলে নিতে হবে।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী আরও বলেন, যে দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে, সে দেশে এ রকম একটা জনিবিরোধী ধ্বংসাত্মক প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন কেন করবে? সব মতকে উপেক্ষা করে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের নেপথ্যে কী আছে, তা আমাদের পলিটিক্যালি ভাবতে হবে।বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ইস্যুতে গণভোট দাবি করেছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রর প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, সারা দেশের মানুষ রামপাল ইস্যুতে কথা বলছে। কেন বলছেন, কোন প্রয়োজনেই বলছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা ভালো করে জানেন। কারণ, উনি আমাদের চেয়ে বাংলাদেশকে কম ভালোবাসেন না।কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে অন্য জায়গায়। তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আশপাশে যে উপদেষ্টারা আছেন, তারা তাকে সুপরামর্শ দিচ্ছেন না। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না। তবে রামপাল ইস্যুতে তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলেন জাফরুল্লাহ।নিজের দেশে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করে বাংলাদেশে করার পেছনে ভারতের কী উদ্দেশ্য আছে- তা ব্যখা করেন তিনি।
দেশের অন্য অঞ্চলে না করে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে করার পেছনে ভারতের অসৎ উদ্দেশ্য আছে উল্লেখ করে জাফরউল্লাহ বলেন, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরামে কয়লা মজুত আছে। ভারত চাইলে ময়মনসিংহের কামালপুরে এ বিদুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে ।বিএনপির অনেক ‘অনুরোধে’ এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘রক্ষা’ করতেই সেদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী।
রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর এর বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী গত ৪ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের বাসায় সস্ত্রীক মতবিনিময় করেন। সেমিনারে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনারা অনেকে জানেন, কদিন আগে আমি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম, আমি কোনো দিন প্রেম করিনি। আমার প্রেম হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, আমার প্রেম হচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে যা-তা বলবেন, আর আমি পাশে বসে আঙুল চুষব! আমি আগাগোড়া কখনো আঙুল চোষা মানুষ ছিলাম না। আমার স্ত্রীর ফ্যামিলিরা আঙুল চোষে, কিন্তু আমি ও আমার পরিবার আঙুল চোষার লোক না। সেদিন বলে এসেছিলাম, জামায়াতের সঙ্গে স্বর্গেও যাব না।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের আগের দিন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে জামায়াতের ইসলামীর একটি প্রতিক্রিয়ার ঘটনার উল্লেখ করেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ৩ তারিখে (৩ আগস্ট) জামায়াত একটি রিঅ্যাকশন দিয়েছিল। তারা বলেছিল, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপির কেউ নন। তাঁর মতামত (২০-দলীয় জোট সম্পর্কে) দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই এবং তারা এর নিন্দাও করেছিল। আমি ভেবেছিলাম, ৪ তারিখের আলোচনায় যাব না। তারপরও আমি গিয়েছিলাম তাদের (বিএনপির) অনেক অনুরোধে। গিয়েছিলাম ফখরুল ইসলামকে রক্ষা করার জন্য। সেমিনারে কাদের সিদ্দিকী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ভারতের একজন মন্ত্রী সেদিন বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন করে আওয়ামী লীগের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। ঔদ্ধত্যের একটা সীমা আছে।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পর ভারত যুদ্ধ করেছে পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের কোনো যুদ্ধে বিজয়ের নিশানা নেই। তারা বিজয়ী হয়নি। তাই বলে কি পাকিস্তান জয়ী হয়েছে? আমি বলব, পাকিস্তানও জয়ী হয়নি, সিজ ফায়ার হয়েছে। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলা বন্ধ করেছে।বীর উত্তম খেতাব পাওয়া কাদের সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ না হলে, আমাদের রক্ত আমরা না ঢাললে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারতের যে উন্নতি হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে যে সম্মান হয়েছে, তার ১০০ ভাগের ১০ ভাগও হতো না। ভারত যদি আগামী ১০০ বছর আমাদের ১৬ কোটি বাঙালির পা ধুয়ে ধুয়ে পানি খায়, তবু ঋণ শোধ হবে না।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দাবি করেন,ভারতের আজকের এই অগ্রগতি-উন্নতির চাবিকাঠি হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ না হলে ভারতের এ অবস্থান পৃথিবীর দরবারে হতো না। পাকিস্তান না হলে আমরা বাংলাদেশ হতাম না। ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ হতো না। আর তা না হলে ভারতের আজকে পৃথিবীর কাছে এত উন্নতি দেখানোর কোনো সুযোগ হতো না।