সড়ক যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে ।প্রতিদিন ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ ।আহত হচ্ছে অনেকেই।বুধবার ছয় জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়ায় ছয়,টাঙ্গাইলে চার, সুনামগঞ্জে তিন, মৌলভীবাজারে এক, সিরাজগঞ্জে এক ও যশোরে একজন নিহত হয়েছেন।বুধবার (সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
বগুড়া : বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকায় অ বুধবার দুপুরে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের কাশিপুরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিনাজপুরগামী বাসের সঙ্গে ঢাকাগামী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন। তাঁরা সবাই নারী।তবে তাৎক্ষণিক তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ছয়জনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে লাশগুলো হাইওয়ে থানায় নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাস দুটি আটক করেছে।তবে কয়েকজন গ্রামবাসীর দাবি, দুর্ঘটনায় আরেকজন নারীর মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ তাঁর স্বামী ঘটনার পরপরই নিয়ে গেছেন।
টাঙ্গাইল :টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পাঁচজন। আজ বুধবার সকাল ছয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত ব্যক্তিরা হলেন পাবনা বেড়া উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামের সোহেল (৩৫), গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কমলপুর গ্রামের সুজন মিয়া (৩৮), বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হাসিমপুর চালুন্দা গ্রামের আফসার উদ্দিন খান (৬০) ও একই উপজেলার মোঘল গ্রামের আমিনুর রহমান (৩৫)।বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, সকাল ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বগুড়াগামী সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক কালিহাতী উপজেলার জোকারচর এলাকায় পৌঁছার পর চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। ট্রাকটি মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে উল্টে যায়। এতে চারজন নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিরা সবাই শ্রমজীবী মানুষ। কম ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে তাঁরা সিমেন্টবাহী ট্রাকে আরোহী হয়েছিলেন। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হন। তাঁদের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।নিহত ব্যক্তিদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় একটি মামলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ: সিলেটের ছাতক উপজেলার জাতুয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫ জন। আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের যাত্রীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, চালক গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলছিলেন।পুলিশ জানায়, নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাসিমপুর গ্রামের মৌসুমি রানী পাল (২৪) ও মুক্তারপুর গ্রামের রাধা রানী বৈষ্ণব (৪৭)। অপর নিহত ব্যক্তি একজন পুরুষ। তাঁর বয়স ২৫-২৬ বছর হবে।
মহাসড়ক পুলিশের জয়কলস ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম শফিকুল ইসলাম বাসের যাত্রীদের বরাত দিয়ে জানান, সিলেট থেকে যাত্রীবাহী একটি বাস সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় যাচ্ছিল। জাতুয়া এলাকায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এতে বাসটি সড়কে পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় চালক মোবাইলে কথা বলছিলেন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন বাসযাত্রী মারা যান। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় কৈতক পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।ওসি বলেন, চালক পলাতক রয়েছেন।
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কনকপুর এলাকায় বাসের ধাক্কায় নান্টু চন্দ্র শীল (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।সকাল ১০টায় মৌলভীবাজার-সিলেট সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার মডেল থানার এসআই শহীদুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ: বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ-বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের নলকা এলাকায় বাসের চাপায় আলী (৩০) নামে এক ভ্যান চালক নিহত হন।বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যশোর: যশোরের চৌগাছা উপজেলার ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেছে ফাতেমা খাতুন (০৫) নামে একটি শিশুর।দুপুরে চৌগাছা-বারোবাজার সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চৌগাছা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দেবাশিষ এ তথ্য জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম:কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ছাগল বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনে কাঁটা পড়ে করিমন বেগম (৫১) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার ছোট কুষ্টারী এলাকায় এ দূর্ঘটনাটি ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, করিমন ছোট কুষ্টারী এলাকায় ভাতিজির বাড়িতে বেড়াতে এসে পার্শ্ববর্তি রেল লাইনে বেঁধে রাখা ভাতিজির ছাগলকে বাঁচাতে গিয়ে তিস্তা থেকে ছেড়ে আসা রমনাগামী ট্রেনের নিচে পড়লে তার এক হাত, এক পা কাঁটা পড়ে এবং মাথার চামড়া ছুলে যায়। তাৎক্ষণিক ওই বৃদ্ধাকে চিলমারী হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে প্রেরণ করে। পরে চিকিৎসারত অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তার মৃত হয়। করিমন বালাবাড়ীহাট মহিয়ত সুন্নাহ এলাকার মৃত হবিবরের মেয়ে এবং তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা ছিলেন বলে জানাগেছে।