বেতন নেই তো কি হয়েছে, দেশ ও মানুষের প্রতি ভালবাসা তো রয়েছে। এই দেশ প্রেমের কারনেই বাবা-মাকে ফেলে দেশ রক্ষার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম শত্রুদের ওপর। আর, এরা তো আমাদেরই সন্তান। একই গ্রামে বসবাস করি। এদের জন্যই ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে কমপক্ষে ১৫ বার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবুও বিলুপ্ত হতে দেইনি প্রতিষ্ঠানটি। কথা গুলো বলছিলেন দেশ প্রেমিক শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (৭২)।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নে অবস্থিত ফুলুয়ার চর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা। দেশে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৭ সালে মাদ্রাসার সুপার সিরাজুল ইসলাম নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত করেন প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৩৯ বছরেও এমপিও ভুক্তি করা হয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কোনো প্রকার বেতন ভাতা বা সরকারি সুযোগ সুবিধা পান না শিক্ষকরা। দীর্ঘ এই সময়ে মাদ্রাসা ছেড়ে অনেক শিক্ষকই চলে গেছেন। শুধু সিরাজুল ইসলামই প্রতিষ্ঠানটি আকড়ে ধরে আছেন। শিক্ষকরা শিশুদের শিক্ষা দিক্ষায় এমনভাবে গড়ে তুলছেন যা উপজেলার অন্যান্য মাদ্রাসা তো বটেই সরকারি প্রাথমিক স্কুল গুলোকেও হার মানিয়েছে। জেলার মধ্যে যত গুলো এবতেদায়ী মাদ্রসা রয়েছে তার মধ্যে প্রথম স্থান দখলে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি বেতনভাতা ও মাদ্রাসার অবকাঠামোগত ভালো না থাকলেও শিক্ষার্থীদের সাফল্যের তিলক কপালে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। একটি মাত্র দোচালা টিনের ঘর। আলাদা করে কোনো কক্ষ নেই। ঘরের দরজা জানালা নেই। নেই প্রয়োজনীয় চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, ব্লাক বোর্ড, টিউবওয়েল ও টয়লেট ব্যবস্থা। শ্রেণি কক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রায়ই গাছতলায় হয়ে থাকে।
হাজারো সমস্যার মধ্যেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেনি। বর্তমানে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দুইশ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৫জন। ১৯৮৫ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার আওতায় আসে প্রতিষ্ঠানের শিশুদের। গত ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছরই ২/৩ করে বৃত্তি লাভ করে এ প্রতিষ্ঠান থেকে। মাদ্রাসার সুপার সিরাজুল ইসলাম বলেন, অবুঝ শিশুদের লেখাপড়ার মাঝেই আনন্দ উপভোগ করি। নিজে উপজেলা শহরের বাসায় বাসায় টিউশনি করাই। এখান যা পাই তা দিয়েই চলে আমার সংসার। সঙ্গে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা। সংসারে ৬ মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। শেষ বয়সে এই শিক্ষকতা করেই যেন মরতে পারি।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাত হোসেন জানান, আমরা জানি ওই প্রতিষ্ঠানের শিশুরা ভালো ফলাফল করে, বৃত্তিও পায় প্রতি বছরই। এটা সম্ভব হয়েছে ওই সুপার সিরাজুল ইসলামের কারনে। এমপিও ভুক্তি না হওয়ার কারনে স্কুলের শিক্ষকরা বেতনভাতা পান না।