%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%b6-%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%81

মাদারীপুর শহরের সবুজবাগ এলাকার ১নং পুলিশ ফাঁড়ির সামনে প্রায় এক’শ বছরের পুরনো পুকুর ভরাটের কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে বালু দিয়ে ভরাটের জন্য পাইপ বসানোর কাজ চললে এলাকাবাসী এর প্রতিবাদে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।স্থানীয় ও বিক্ষোভকারী সূত্রে জানা গেছে, শহরের সবুজবাগ লঞ্চঘাট এলাকার পুকুরটিতে প্রায় একশ বছর ধরে স্থানীয় জনগণ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করে আসছে। পুকুরটির আদি নাম হরে কৃষ্ণ সীতানাথ হলেও পরবর্তীতে কো-অপারেটর পুুকুর নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে এই ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি ১নং পুলিশ ফাড়ি পুকুর নামে পরিচিত লাভ করলেও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় এই পুকুরটিকে হরে কৃষ্ণ সীতানাথ পুকুর হিসেবে পুজো, মানতসহ নানা পূর্ণ্য কাজ করে থাকে। সেই সাথে স্থানীয়রা এই পুকুরে গোসলসহ নানা প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম করে থাকে।

ইতিমধ্যে শহরের প্রায় পুকুর, খাল, জলাশয় বালু দিয়ে ভরাট করা হয়। এই পুকুরটি ভরাট হয়ে গেলে একদিকে পরিবেশ ভারাসাম্য হারাবে অন্যদিকে স্থানীয়রা নানা সমস্যায় পড়বে। অতিপ্রয়োজনীয় পুকুরটি ভরাট করার পরিকল্পনা করায় মানবববন্ধন কর্মসূচিতে শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ সব বয়সের মানুষ অংশ নেন।

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সরকারী এই পুকুরটিতে লিজ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছিল। সম্প্রতি পুকুরটি ভরাটের পরিকল্পনা করা হয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার পুকুর ভরাটের জন্য বালুর পাইপ বসানো হলেও স্থানীয়দের চাপের মুখে পড়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরটি ভরাটের পরিকল্পনা করা ও ইতিমধ্যে বালু দিয়ে ভরাটের জন্য পাইপ বসানোর কাজ শুরু করায় স্থানীয় ও সাধারণ জনগণসহ মাদারীপুরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে অবিলম্বে পুকুর ভরাটের পরিকল্পনা প্রত্যাহার ও ভরাটের জন্য ব্যবহৃত পাইপ সরানোর দাবি জানান। তা না হলে এলাকাবাসী আরো বৃহত্তম কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।

এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, এক এক করে শহরের খাল, পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয় বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এতে করে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে। আর এই পুকুরটি অনেক পুরোনো। এটি জেলার ঐতিহ্য বহনের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাসহ মাছ চাষ ও স্থানীয়রা নানা কাজে ব্যবহার করছে। তাই এটি রক্ষার জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত।অপরদিকে পুকুর ভরাট বন্ধের ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

লিখিত আবেদনে বলা হয়, মাদারীপুর পৌর এলাকায় অবস্থিত ১নং পুলিশ ফাড়ি সংলগ্ন পুকুরটি মাদারীপুর পৌরসভার মাস্টার প্ল্যানে প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে বর্ণিত আছে। পুরাতন এই জলাশয়টি প্রাকৃতিক সলল পানি ও বৃষ্টির পানি ধারণ করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার ব্রিগেড কর্তৃক অগ্নি নির্বাপন কাজে ব্যবহৃত হয়। এই জলাশয়টি ভরাট হলে বাসাবাড়ি, স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জরুরী অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখিন হবে। লিখিত আবেদনে আরো উল্লেখ্য আছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রদত্ত ৩১টি নির্দেশনার মধ্যে ৫ নং নিদের্শনায় শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাশয় রক্ষার নির্দেশ দেন। তবুও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে কিছু মহল এই জলাশয়টি ভরাট করার কার্যক্রমে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাই জনস্বার্থে ও পরিবেশের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে বলে জলাশয়টি ভরাট বন্ধের কথা উল্লেখ রয়েছে।এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, জনস্বার্থে ও পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে এই জলাশয় ভরাট করার কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানাই।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ^াসকে একাধিকবার মোবাইল করা হলেও সে ফোন রিজিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।