অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তির বয়স প্রায় ১২০০ বছর। তৎকালীন বাংলাদেশের রাজশাহীর রাজা কংসনারায়ণ রায়ের হাতে ৮০০ বছর আগে শুরু হয় পূজা। পুরাতাত্ত্বিক বিভাগ এই ঐতিহাসিক দুর্মূল্য দুর্গা মূর্তি নিয়ে যেতে চেয়েও পারেনি।বাংলাদেশের মাটিতে যে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল, সেই মূর্তিই রয়েছে জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া কালীবাড়ি এলাকার চক্রবর্তী পরিবারে। প্রচারে না এলেও, ঐতিহাসিক গুরুত্বের বিচারে তাদের পূজাই সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা বলে দাবি করে চক্রবর্তী পরিবার। এমনকি, হুসেন শাহের আমল থেকেই এই অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি পূজিত হয়ে আসছে বলে দাবি তাদের।
এক সময় বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে কংসনারায়ণ রায়ের বাড়িতে দুর্গাপূজার সময়ে ১২০টি পাঁঠাবলি হত। বলি বন্ধ করে দিয়েছে চক্রবর্তী পরিবার। বংশ পরম্পরায় এখনও প্রাচীন পুথি দেখে পূজা করা হয় এই দুর্গা মূর্তির।এই পরিবারের প্রধান মধুসূদন চক্রবর্তী জানান, অধুনা বাংলাদেশের হরিপুরের পাবনাতে এই পূজার সূচনা করেন কংসনারায়ণের ছেলে মুকুন্দরাম রায়। সেই সময় হুসেন শাহের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পরে রাজা শ্রীহট্ট সেনের বাড়িতে বিগ্রহ নিয়ে টাঙ্গাইলে আসেন মুকুন্দরাম এবং রাজচক্রবর্তী উপাধি নিয়ে বসত শুরু করেন। কেবলমাত্র এই বিগ্রহটি বাঁচানোর জন্য তিনি তার উপাধি পরিবর্তন করেন। মুকুন্দরাম রায় থেকে চক্রবর্তী হন। তার পরে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে ফের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং যুদ্ধে জয়ীও হন বলে জানান মধুসূদন চক্রবর্তী।ঐতিহাসিক এই দুর্গামূর্তিতে লক্ষ্মী-সরস্বতী নেই। আছেন কার্তিক ও গণেশ। নিত্যপূজায় ৯ রকমের ভাজা দিয়ে ভোগ দেয়া হয় মাকে। দুর্গাপূজার সময় অষ্টধাতুর মূর্তির পাশে মৃণ্ময়ী মূর্তি পূজিতা হন। বর্তমানে, প্রতিদিন অর্ঘ্য চক্রবর্তীর জ্যেঠতুতো দাদা কল্যাণ চক্রবর্তী দুর্গাপূজা করে থাকেন।
মধুসুদন চক্রবর্তীর ছেলে অর্ঘ্য চক্রবর্তী জানান, দুর্গাপূজার সময় তাদের বেশকিছু নিয়ম আছে ভোগের ক্ষেত্রে। পঞ্চমীতে ঠাকুর আনা হয়। সপ্তমীতে খিচুড়ি ভোগ দেয়া হয়। অষ্টমীতে বোয়াল মাছের মাথা দিয়ে কচুর শাক, নবমীতে বোয়াল মাছ দিয়ে ভোগ দেয়া হয়।দশমীর দিন মায়ের পাতে থাকে পান্তাভাত, শালুক শাক। বিসর্জনের দিন বাড়ির বড় বউ প্রথমে মাকে মিষ্টিমুখ করান তারপর বাড়ির অন্যান্য সদস্য ও পাড়া-প্রতিবেশীরা মাকে বিদায় জানান। কল্যাণ চক্রবর্তী জানান, পুরাতত্ত্ব বিভাগ থেকে এই দুর্গামূর্তি নিয়ে যেতে এসেছিল। তারা সঠিক জানেন না কত সালে পূজাটি শুরু হয়েছিল, তবে আট শতাধিক বছরের পুরনো হবেই বলে দাবি চক্রবর্তী পরিবারের।
সূত্র: ওয়েবসাইট