%e0%a6%a1%e0%a6%bf%e0%a6%8f%e0%a6%ae%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a7%9fভাড়াটিয়াদের তথ্য গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সেই কাজ এখন সাধারণ ব্যবসায়ীদের দিয়ে করানো হচ্ছে। এমনকি নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা ডিএমপির সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) সার্ভারের পাসওয়ার্ডও তাদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ওই সার্ভারে ঢুকে যখন খুশি তখন নিজেদের মতো করে ভাড়াটিয়াদের তথ্য নিবন্ধন করছেন। এতে ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে করছে নগরবাসী। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এমন হওয়ার কথা নয়। এরকম কোনও থানা করে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যথেষ্ট গোপনীয়তায় পুলিশ এই কাজ করছে।

এদিকে, বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় নীলক্ষেতের সিটি করপোরেশন মার্কেটের বিভিন্ন ফটোকপি ও কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, নিউমার্কেট থানার সংগৃহীত তথ্য ফরমগুলো সার্ভারে এন্ট্রি দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে একটি হলো নীলক্ষেতের ‘এস এ এন্টারপ্রাইজ’ (দোকান নম্বর ৩০)। এই দোকানের দুটি কম্পিউটারে ডিএমপির সার্ভারে তথ্য ফরমের এন্ট্রি দিচ্ছেন দুজন ব্যক্তি। এদের একজনের নাম রাজু।

ডাটা এন্ট্রির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে একশ ফরম এন্ট্রি দিয়েছি। থানা টাকা দেবে বলে বলছে।’ তবে কত টাকা দেবে, তা বলতে পারেননি তিনি। সিআইএমএস সার্ভারে কীভাবে আপনি প্রবেশ করেন এ প্রশ্নের জবাবে রাজু বলেন, ‘আমাদের কাছে সার্ভারের পাসওয়ার্ড দিয়েছে পুলিশ। আমরা নিজেরাই সার্ভারে প্রবেশ করে এন্ট্রি দেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু একা না, মার্কেটের আরও অনেক দোকান থেকেই সার্ভারে এই ফরম এন্ট্রি দেওয়া হচ্ছে।’ রাজুর কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এরপর অন্যান্য দোকানে গেলেও দেখা যায়, সে সব দোকানের ভেতরে সবার সামনেই ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সামনেই সার্ভারে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে।

নীলক্ষেতের সিটি করপোরেশন মার্কেটের ২৭ নম্বর দোকানের নাম ‘সিটি ট্রেড আইডি সল্যুয়েশন’। ভেতরে ঢুকেই দেখা গেল, কম্পিউটারের সামনে ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম। দোকানের মালিক মো. ইসমাইল হোসেন সোহাগ। তিনি তখন দোকানেই বসা ছিলেন। ফরমগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে, ইসমাইল হোসেন সোহাগ বলেন, ‘জোর করে প্রত্যেক দোকানদারকে পুলিশ এসব ফরম দিয়েছে। সবাইকে চারশ থেকে পাঁচশ ফরম ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি মাত্র ৫০টি ফরম আনছি। একটা ফরম সার্ভারে এন্ট্রি দিতে কম্পিউটারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দুই মিনিট সময় লাগে। অভ্র-তে ডাটা এন্ট্রি দিতে হয়।’ কত টাকা করে দেবে এ প্রশ্নের উত্তরে সোহাগ বলেন, ‘আমাদের ৫০ টাকা করে দিবে বলছে। তবে কত টাকা দিবে জানি না। টাকা না দিলেও-বা কি করার আছে!’

এদিকে, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নিউমার্কেট থানা পুলিশ এসব তথ্য ফরম তাদের কাছে দিয়েছে। সার্ভারে এন্ট্রি করার বিষয়টিও তারা দেখিয়ে দিয়েছেন। তবে বিষয়টি গোপনীয়তার সঙ্গে করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ। এবিষয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বসে থেকে এসব এন্ট্রির কাজ করাচ্ছে। ওদের কাছে কোনও পাসওয়ার্ড নেই।’ তবে দুই প্রতিবেদক যখন নীলক্ষেতের ওই দোকানগুলোতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন সেখানে কোনও পুলিশ সদস্য ছিলেন না। পরে ওসি মোহাম্মদ আতিকুর রহমান কয়েক দফায় প্রতিবেদকদের ফোন দিয়ে বলেন, ‘সব ফরম নিয়ে এসেছি। এখন সেখানে কোনও ফরম নেই। আপনি গেলেও কোনও ফরম এখন পাবেন না।’

ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরমের বিষয়ে গোপনীয়তার কথা বলা হলেও তা সাধারণ মানুষকে দিয়ে সার্ভারে এন্ট্রি দেওয়ার বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) শাহাবুদ্দিন কোরেশী বলেন, ‘এভাবে করার কোনও সুযোগ নেই। আপনি কি নিশ্চিত? এটা আমি দেখতেছি। এরকম হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এটা যদি হয়ে থাকে, তাহলে আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘একাজে নিশ্চয়ই গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে, ইনশাল্লাহ!’

ঢাকা মহানগরের বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য চেয়ে বিতরণ করা ২২ লাখ ফরমের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ ফরম তথ্যসহ ফেরত পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুরু হয়েছে, ডাটাবেজ তৈরির কাজ। জমা পড়া ফরমগুলোর মধ্য থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ ফরমে থাকা নাগরিকের তথ্য সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিআইএমএস) সংরক্ষণ করা হয়েছে। জানা গেছে, বাকি তথ্য এ বছরের মধ্যেই সিআইএমএসে সংরক্ষণ করা হবে। পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি হলে রাজধানীর অপরাধ আরও হ্রাস পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ডিএমপি।

ডিএমপি থেকে জানা গেছে, মোট ২২ লাখ ফরম নগরীতে ছাড়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৭টি ফরম পূরণ করে ফেরত দিয়েছে নগরবাসী। নাগরিকদের এসব তথ্য সংরক্ষণের জন্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হয়েছে, যেটি সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) হিসেবে পরিচিত। গত ১ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় সিআইএমএসের উদ্বোধন করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। প্রায় এক লাখ ফরমের তথ্য সেখানে ইনপুট হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপি থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন ধরনের নাশকতা-অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থামানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ডিএমপি নগরীর সব ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছর এ বিষয়ে তেমন কোনও পুলিশি উদ্যোগ না থাকলেও ২০১৬’র শুরু থেকে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেন। এক পৃষ্ঠার একটি সাদা ফরম ভাড়াটিয়াদের পূরণ করতে দেওয়া হয়। সেখানে ভাড়াটিয়াদের ছবির পাশাপাশি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ, পেশাসহ বাসার বাসিন্দা এবং গৃহকর্মী ও ড্রাইভারের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের লোগো সম্বলিত ওই ফরমের ফটোকপি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আবার তা সংগ্রহ করেন পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশের এই উদ্যোগের পর রাজধানীবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ আন্তরিকতার সঙ্গে ফরম পূরণ করে দিলেও অনেকে প্রশ্ন তোলেন, ব্যক্তিগত তথ্য পুলিশকে জানাবেন কেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন, ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। পুলিশ সেই অধিকার ভঙ্গ করতে পারে না। পুলিশের এই কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে গত ৫ মার্চ আদালতে রিট আবেদন করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। যদিও রিটটি পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়।

এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের তাদের তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সিআরপিসি’র ৪২ ধারা অনুযায়ী পুলিশকে সহায়তা করতে প্রতিটি নাগরিক বাধ্য। তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হলেও তথ্য ফরম পূরণ করে পুলিশকে সহায়তা করবেন।’ পুলিশ জানিয়েছে, তথ্য ফরম সংগ্রহের পর অপরাধ দমন ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) চালু করা হয়েছে। সিআইএমএস প্রকল্পের আওতায় নাগরিকদের সব তথ্য গোপনীয়তা অবলম্বন করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশেষ ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে।

Source : বাংলা ট্রিবিউন