ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেদের শততম জয় হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। সফরকারী আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ রানে জিতেছে টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতলেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করবে মাশরাফি-সাব্বির-তাসকিন-সাকিব-তামিম-মুশফিকরা।আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে লাল-সবুজরা। আর জিততে পারলেই ১০০টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে জয়ের মাইলফলকে নিজেদের নাম লেখাবে বাংলাদেশ।
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল। অভিষেক হওয়া সেই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। পরাজয় দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা। প্রথম জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১২ বছর। ওয়ানডেতে ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নেয় টাইগাররা।অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ৩১৩টি। সবশেষ আফগানদের বিপক্ষে জয় পাওয়ায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা জিতেছে ৯৯টি ম্যাচে। এর বিপরীতে ২১০টি ম্যাচ হেরেছে। ফল আসেনি চারটি ম্যাচে।টাইগারদের জয় সবচেয়ে বেশি জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার-গ্রান্ড ফ্লাওয়ার-হিথ স্ট্রিকদের দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৬৭টি ওয়ানডে খেলে জয় পেয়েছে ৩৯টি ম্যাচে, হেরেছে ২৮টি ম্যাচে।
টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল এশিয়ার আরেক পরাশক্তি শ্রীলঙ্কা। ডি সিলভা-রানাতুঙ্গা-জয়সুরিয়া-দিলশানদের দেশটির বিপক্ষে ৩৮টি ওয়ানডে খেলেছে টাইগাররা। তবে, ৩৩টি ম্যাচে হারের পাশাপাশি লঙ্কানদের হারিয়েছে ৪টি ম্যাচে।বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আটবার করে ম্যাচ জিতেছে কেনিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। কেনিয়ার বিপক্ষে ১৪ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৮ বার, হেরেছে ৬ বার। আর কিউইদের বিপক্ষে ২৫ ম্যাচ খেলে ৮ বার জিতলেও হেরেছে ১৭টি ম্যাচে।
বাংলাদেশ ৩৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ৩১টি পরাজয়ের পাশাপাশি টাইগারদের জয় চারটি ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে ৩২ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ৫টি ম্যাচে। তিনটি ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও জিতেছে পাঁচবার। টাইগারদের কাছে সাতবার হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনবার হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, চার ম্যাচের চারটিতেই হেরেছে স্কটল্যান্ড। এছাড়া, আইসিসির সহযোগী দেশগুলোকে হারানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। যে কোনো সিরিজের প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ন। দীর্ঘ ১০ মাস পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরা বাংলাদেশ দলের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ন ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে বাংলাদেশেরই। বুধবার মিরপুরে সফরকারী দলের সঙ্গে দ্বিতীয় ওয়ানডে। এ ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা মনে করছেন কঠিন সময় চলে গেছে প্রথম ওয়ানডে জয়ে।
মঙ্গলবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেন, খেলার ভেতর থাকলেও যে কোনো একটা সিরিজের প্রথম ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ন। প্রথম ম্যাচ জিতে বের হয়ে যেতে পারলে মানসিকভাবে অনেক হালকা থাকা যায়। আফগানিস্তানের সাথে প্রথম ম্যাচে আমাদের কঠিন সময়ে চলে গেছে। আশা করি পরের ম্যাচে আরেকটু ভালো অবস্থানে থাকবো মানসিকভাবে।প্রথম ওয়ানডেতে বড় সংগ্রহের আশাই দেখাচ্ছিলেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। এ বাঁহাতি ৮০ রান করে বিদায় নেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও (৬২) পারতেন সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে দলের রানকে মজবুত অবস্থানে নিয়ে যেতে। শেষ দিকে সাকিব আল হাসান দারুণ সেট হয়েই আউট হয়েছেন ৪৮ রান করে।
উইকেটে যারা সেট হবেন তাদের কাছ থেকে বড় রান আশা করছেন মাশরাফি। প্রথম ম্যাচে তিন ব্যাটসম্যান দারুণ সেট হয়েও বড় স্কোর করতে না পারায় আক্ষেপ রয়েছে মাশরাফির, ‘বড় রান এটাতো আশা করি। অনেকদিন পর ম্যাচ খেলছে। আগে যেমন ক্যালকুলেশন ছিল। এই জিনিসটা থেকে হয়তো অনেক দূরে ছিল। সবাই বুঝতে পারছে। তামিম-রিয়াদ দু’জনের ১০০ করার সুযোগ ছিল। সাকিব হয়তো বা বড় ফিফটি করতে পারতো।মাশরাফির আশা পরের ম্যাচ থেকেই ঠিক হতে থাকবে সব কিছু, এর থেকে যখন বড় টিমের সঙ্গে যখন খেলবো তখন কঠিন হবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন তো ২৮০ এমনকি ৩০০ রান যেভাবে চেজ হচ্ছে। যদি সুযোগ থাকে, উইকেট যদি প্রেফার করে আমাদের সেট ব্যাটসম্যান যদি বড় রান করে তাহলে ভালো হয়। আশা করি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ছোট দলগুলোর একটা বড় সময় কেটে যায় ‘মনের আনন্দে’ খেলার নীতিতে। মাঠে নামার আগে তারাও প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বুঝেশুনে রণকৌশল ঠিক করে বটে, তবে পূর্ণ পেশাদার দলের সঙ্গে এখানে একটা ব্যবধান তো থাকেই। এখানেও আলাদা করে নজর কাড়ল আফগানিস্তান।
আফগানিস্তান দল ক্রিকেটটাকে নিয়েছে গুরুত্বের সঙ্গেই। পুরোদস্তুর পেশাদার দল এখনো হয়তো হয়ে ওঠেনি। সবকিছু পূরণ করার সামর্থ্যও হয়তো শতভাগ নেই। কিন্তু চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না। এ কারণেই এত দ্রুত উত্থান তাদের।প্রথম ওয়ানডেতে নিজেদের সামর্থ্য বোঝানো আফগানরা যে বেশ পড়াশোনা করে মাঠে নেমেছিল, সেটা বোঝা গেল রশিদ খানের কথায়। এই লেগ স্পিনার নিজেও বেশ চোখে পড়েছেন বোলিং দিয়ে। বিশেষ করে গুগলিতে যেভাবে বিভ্রান্ত করলেন মুশফিকুর রহিমকে। আজ সংবাদ সম্মেলনে রশিদ বললেন, ‘ম্যাচের আগে আমাদের টিম মিটিং তো হয়েছিল। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো ধরে আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম। মুশফিক স্লগ সুইপ খুব ভালো খেলে। অধিনায়ক আমাকে বলেছিল, আমি যদি যথেষ্ট টার্ন করে এমন একটা গুগলি দিতে পারি, তাহলে স্লগ সুইপ করতে গেলে ও সমস্যায় পড়বে। আমি সেটাই করেছি।রশিদ বলেছেন, প্রত্যেকটা টিম মিটিংয়ে কোচ-অধিনায়ক আসলে আমাদের একটা কথাই বলেন। মাঠে নেমে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে। গত ম্যাচেও আমরা তা-ই করছি। একটুর জন্য জিততে পারিনি। ম্যাচটা আমাদের জেতাই উচিত ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভাগ্য পাশে ছিল না। আমরাও কিছু ভুল করেছি। আশা করি, পরের ম্যাচগুলোতে এই ভুলগুলো করব না। সেই ভুলগুলো বলতে চলে আসছে শেষ ১০ ওভার। হাতে ৮ উইকেট নিয়ে ৬০ বলে ৭৭ রানের সহজ সমীকরণ মেলাতে পারেনি আফগানরা। এমন ভুল আর হবে না বলেই মনে করেন রশিদ।
গত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশে খেলে যাওয়া রশিদ ব্যাটসম্যানের মনও পড়ার চেষ্টা করেন, ‘ব্যাটসম্যানের মনে কী চলছে, সেটাও বোঝার চেষ্টা করি। বোঝার চেষ্টা করি, ও কী করতে চাচ্ছে আমার লেগ স্পিনে। সেভাবে বুঝেই আমি তাকে গুগলি দিই।কীভাবে এত ভালো গুগলি দিতে শিখলেন, লেগ স্পিনই বা কে শেখাল তাঁকে। রশিদ জানালেন, ‘কেউ আমাকে সেই অর্থে সাহায্য করেনি। আমি আপনা-আপনিই শিখেছি। তবে আমি শহীদ আফ্রিদির কাছ থেকে অনুপ্রাণিত। শুরুতে তাঁকে অনুসরণ করতাম।