আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে বড় কোনো রদবদল হচ্ছে না। তবে টানা সাত বছর দায়িত্ব পালন করা অনেক নেতার দায়িত্ব ও পদ-পদবিতে কিছুটা পরিবর্তন এবং ক্ষেত্রবিশেষ পদোন্নতি হবে। আলোচিত ১/১১-এর পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে নতুন ধারা (শেপ) তৈরি হয়েছে তার ওপরই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আস্থা রাখতে যাচ্ছেন বলে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।এদিকে,আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই ২০০৯ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে দায়িত্ব পেয়েছেন। এরপর ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, এবারো তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন না দলীয় প্রধান। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার পাশাপাশি দলীয় আনুগত্যকে বড় করে দেখছেন। এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসেবে সামনে রাখছেন রাজনীতির দুঃসময় ১/১১ পরিস্থিতিকে।দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিশ্ব রাজনীতির চমক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিডারশিপকে নিয়ে দেশ-বিদেশে যারা কাজ করছেন, তাদের সামনে রেখেই দল সাজাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদসহ অন্যান্য পদে বড় রকমের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই থেকে যাবেন। সেই সঙ্গে নতুন পদ সৃষ্টি হওয়ায় কিছু নতুন মুখ যোগ হবেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে এবারের সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ভিশন ২০৪১, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের উল্লেখ থাকবে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অন্য উপকমিটিগুলো বিশেষ করে প্রচার উপকমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পদক ও পুরস্কার প্রাপ্তি তুলে ধরে প্রচারণা চালাবে।সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ৭৩ সদস্য থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৮১ সদস্যবিশিষ্ট করার একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।দলের প্রভাবশালী এক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি যেহেতু নীতি নির্ধারণী ফোরাম; তাই সেখানে আকার বাড়ানোর চেয়ে কমিটিকে গুণবহ করতেই প্রধানমন্ত্রী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।তবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বেশকিছু সংযোজন আসছে। এ নিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটি কাজ করছে। সূত্র জানায়, তৃণমূলে দলের কমিটির আকার বাড়বে। মহল্লা কমিটি ৩১ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ৪১ করার প্রস্তাব প্রস্তুত হচ্ছে। ইউনিট কমিটি (মহানগর) ৩৭ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার প্রস্তাব প্রস্তুত করা হচ্ছে। থানা কমিটিও বাড়ানোর প্রস্তাব আসছে। বর্তমানে থানা কমিটির ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট। ওয়ার্ড, পৌর ও ইউনিয়নে বর্তমানে সহসভাপতি আছেন ৫ জন করে। তা বাড়িয়ে ৭ জন করা হবে। যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন ২ জন করে। তা একজন করে বাড়ানো হবে।এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের ২৭ ধারায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড সংযোজিত হবে। বর্তমানে এ ধারাটি কেবল ১১ সদস্যের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয়বোর্ড সম্পর্কিত।সংসদীয় বোর্ডের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডও কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হবে। এটি হতে পারে ১৯ সদস্যের।
গঠনতন্ত্রে আরেকটি বিষয় যুক্ত হবেÑআওয়ামী লীগের জেলা কিংবা অন্য কোনো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদে থাকলে মূূল দলের উপকমিটির সহসম্পাদক পদে আসা যাবে না।আর মূল দলের ৭৩ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদ বাড়িয়ে ৮১ সদস্য করা হতে পারে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পদ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা বর্তমানে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনটি থেকে বাড়িয়ে পাঁচটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া নতুন গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এক প্রকারে নিশ্চিত বলে জানা গেছে। ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করা হলে সেখানে নতুন বিভাগীয় সম্পাদকের পদ সৃষ্টির সুযোগও গঠনতন্ত্রে থাকবে বলে জানা গেছে। মানবাধিকার, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হবে।
সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত!: জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের ভোটে দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের বিধান আছে। ভোটের মাধ্যমে এই নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা থাকলেও সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। ১৯৮১ সাল থেকে এ দলটির নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দলে পরিণত করেছেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এ পদের জন্য অনেকে আগ্রহী। তবে এখন পর্যন্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ‘রানিংমেট’ হিসেবে ‘দক্ষ ও বিশ্বস্ত’ আশরাফকেই আবার এ পদে রাখবেনÑ বিষয়টি এক রকম নিশ্চিত। এবার সাধারণ সম্পাদক হলে এ পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হ্যাটটিক করবেন।
সভাপতিমন্ডলীতে নতুন মুখ: আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম ১৫ সদস্যবিশিষ্ট, যা আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯ সদস্যের হতে পারে। বর্তমান ১৫ সদস্যের কমিটিতে ১২ জন সদস্য রয়েছেন। যাদের মধ্যে সতীশ চন্দ্র রায় ও সাহারা খাতুন বয়স বিবেচনায় বাদ পড়তে পারেন।সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পদের জন্য অনেক নেতাই প্রত্যাশায় আছেন। তবে অতীতে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে দলের জন্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সূত্র। যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে রয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বর্তমান কমিটি থেকে যারা পদোন্নতি পেয়ে এ ফোরামে যুক্ত হতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. আবদুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সিলেট অঞ্চল থেকে সাবেক চিফ হুইফ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহিদ অথবা অর্থমন্ত্রীর ভাই আবুল মোমেন যুক্ত হতে পারেন সভাপতিমন্ডলীতে, সতীশ চন্দ্র রায় বাদ পড়লে উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁওয়ের রমেশ চন্দ্র যুক্ত হতে পারেন এ ফোরামে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুসারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ তিনটি। আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে এ পদের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হতে পারে বলে জানিয়েছে দলটির একটি সূত্র। দলের হয়ে কাউন্টার পলিটিক্সে বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক নিয়ে মাঠে থাকা প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের পদোন্নতির সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ডা.দীপু মনির সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বীর বাহাদুর, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ড. হাছান মাহমুদ।গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সাতটি। ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়বে। এ ছাড়া ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ হলে সাংগঠনিক বিভাগ হবে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটি থেকেই পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ঢাকা ও খুলনা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সমালোচনা বিস্তর। এ দু’-একজন ছাড়া বাকিদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেয়ার জন্য বেশ কিছু সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নাম আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের হাতে। কমিটির আকার বাড়ায় অন্তত ১০-১২ নতুন মুখ আসতে পারেন এবারের কমিটিতে। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা যারা ১/১১ সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।
এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে পারেন আফজাল হোসেন। তিনি বর্তমানে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। এছাড়াও এ পদে অথবা কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য যেকোন পদে নতুনদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা শাহে আলম, ইসহাক আলী খান পান্না, পংকজ দেবনাথ এমপি, খলিলুর রহমান খলিল। খুলনা বিভাগের দায়িত্বে আসার আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন। নতুন মুখের মধ্যে আলোচনায় আছেন বীরেন শিকদার, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, সাইফুজ্জামান শিখর, আব্দুল মজিদ।চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে আসতে পারেন সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর মধ্য থেকে কেউ। রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য কোন পদে আসতে পারেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইসরাফিল আলম, হাসান কবির আরিফ, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি, উমা চৌধুরী। রংপুর বিভাগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পদোন্নতি হলে এ বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দেখা যেতে পারে মাহবুবা আক্তার গিনি অথবা মাহমুদ হাসান রিপনকে।
নতুন বিভাগ হলে ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেতে মুখিয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো: আবু কাউসার, ইকবাল হোসেন অপু, বাহাদুর বেপারি, নাহিম রাজ্জাক, আয়মন আকবর, আনোয়ার হোসেন। কুমিল্লা বিভাগের আলোচনায় আছেন জহির উদ্দিন মোহাম্মদ লিপ্টন, শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজু। চট্টগ্রামে না হলে এ বিভাগের দায়িত্বেও দেখা যেতে পারে সুজিত রায় নন্দীকে। ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বে আসতে পারেন মির্জা আজম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুল হক শাকিল, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন, মারুফা আক্তার পপি। ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে আসতে পারেন ঢাকা মহানগরের কোন তরুণ এমপি। অন্য কোন বিভাগের কাউকেও দেয়া হতে পারে ঢাকার দায়িত্ব। তবে এ বিভাগে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের করা দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পুনরায় তাকে দলে ফেরানোর কথা ভাবছে দলটির হাইকমান্ড। এটি প্রায় এক রকম নিশ্চিত।কারণ এর মধ্য দিয়ে সরকারের স্বচ্ছতা প্রমাণিত হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।এ ছাড়া নারীদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে আসতে পারেনÑ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, রওশন জাহান সাথী, নুরজাহান মুক্তা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক স্থপতি ইয়াফেস উসমান, শিক্ষা সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ, শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর সম্পাদকমন্ডলী থেকে জায়গা পেতে পারেন দলের উপদেষ্টাপরিষদে।এদিকে,নানাসমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক নিয়োগে এবার কড়াকড়ি হচ্ছে। আগামী সম্মেলনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহসম্পাদক নিয়োগ এবং তাদের কর্মকান্ড নির্ধারিত করে দেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই এবার দেখভাল করবেন।সূত্র জানায়, খেয়াল খুশিমতো, ঢালাওভাবে এত সহসম্পাদক নিয়োগের বিষয়ে দলীয় নেতাদের সামনে ও বিভিন্ন ফোরামে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এত সহসম্পাদক নিয়োগের কারণ হিসেবে, দায়িত্বপ্রাপ্তরা তখন বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনকে কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উত্থাপন করেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই এমন যুক্তির সমালোচনা রয়েছে বিস্তর। এজন্য আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম সম্মেলনে সহসম্পাদক নিয়োগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখবেন বলে জ্যেষ্ঠ নেতা ও ঘনিষ্ঠদের তিনি জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক পদটি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তার ফসল। আগে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্যদের কেবল ‘উপকমিটির সদস্য’ হিসেবেই মূল্যায়িত করা হতো। পরে ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো দলের গঠনতন্ত্রে সহসম্পাদক পদ সংযোজন করা হয়। পরবর্তীকালে ৯৫ জন সহসম্পাদক নিয়োগ করা হয়েছিল। তাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা। এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের কাউন্সিলে কোনো সহসম্পাদক নিয়োগ করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ৬৬ জন সহসম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। এসব সহসম্পাদক নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে।আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ অনুচ্ছেদের চ ধারায় (বিভাগীয় উপ-কমিটি গঠন) বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করিয়া উপ-কমিটি গঠন করিবে। উক্ত উপ-কমিটি ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন সম্পাদক, অনূর্ধ্ব ৫ জন সহসম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে।
আওয়ামী লীগের ১৯টি সম্পাদকীয় পদে ৫ জন করে সহসম্পাদক নিয়োগ দিলে তার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫ জন। কিন্তু প্রথম ঘোষিত ৬৬ জনের পরে দফায় দফায়, প্রকাশ্যে-গোপনে সহসম্পাদকের চিঠি দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বর্তমানে উপকমিটির সহসম্পাদক কতজন তার সদুত্তর পাওয়া দুরূহ। তবে দফতর সূত্রে জানা গেছে, এ সংখ্যা ৪৬৭ জন।এসব সহসম্পাদক নিয়োগে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এক সম্পাদক। সহসম্পাদকের সংখ্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উষ্মা প্রকাশের পর ধানমন্ডিতে এক দলীয় সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরও এসব সহসম্পাদক নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, উপকমিটির সহসম্পাদক ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে। পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে, সেই বলে আমি আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। উপকমিটির এই নেতাদের অনেকে আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে বলেও ওই সময় তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
উপকমিটির এসব সহসম্পাদকের কাজ দলের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকলেও, তার ধারে কাছে নেই তারা। সব সম্পাদকীয় বিভাগে উপকমিটিও গঠিত হয়নি। তবে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত বিভিন্ন উপ-পরিষদে কিছু সহসম্পাদককে রাখা হয়েছে। অথচ গঠনতন্ত্রের একই ধারায় সহসম্পাদকদের কাজের বর্ণনায় বলা আছে- উপ-কমিটিসমূহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম জোরদার করার কাজে সহায়তা করিবে। প্রত্যেক বিভাগ উহার কর্মকান্ডসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সরবরাহ ও সংরক্ষণ করিবে এবং সময়ে সময়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করিবে। প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার উপ-কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হইবে। সভায় স্ব-স্ব উপ-কমিটি তাহাদের কর্মকা- মূল্যায়ন ও করণীয় নির্ধারণ করিবে।২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলের পর ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে উপকমিটির নেতাদের নাম প্রকাশ হয়। সে সময় উপকমিটির সহসম্পাদক হিসেবে ত্যাগী ও যোগ্য ৬৬ জনের নাম এসেছিল। যাদের অধিকাংশই সাবেক ছাত্রনেতা। কিন্তু এর পর চক্রবৃদ্ধি সুদের মতো ধাপে ধাপে এই সংখ্যা বাড়ানোয় মহিমা কমে যায় এ পদটির। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, নেতাও সহসম্পাদক, আবার তাদের কর্মীরাও সহসম্পাদক, বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতারাও একই পদধারী। সাবেক কয়েক ছাত্রনেতা আলাপচারিতায় বলেন,সহসম্পাদক পরিচয় দিতেও এখন লজ্জা লাগে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।দলীয় সূত্র মতে, কেন্দ্রীয় উপকমিটির বিশাল বহর এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, থানা ও জেলা কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া নেতারাও বিভিন্ন ছলে আদায় করে নিয়েছেন দলের সহসম্পাদকের পদ। এমনকি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে ঠাঁই না পাওয়া বঞ্চিতদেরও শেষ ভরসাস্থল যেন কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকের পদটি। নামে কেন্দ্রীয় হলেও এই কমিটি নেতাকর্মীদের কাছে ক্রমাগত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।
দলের আগামী সম্মেলনকে সামনে রেখে এসব সহসম্পাদক এখন নতুন ব্যস্ততায় মেতেছে। তাদের অধিকাংশই এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার প্রত্যাশা ও উচ্চাশা ব্যক্ত করছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দল ক্ষমতায় থাকা না থাকার বিষয় না; মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেশবাসীর কাছে একটু আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু শত শত সহসম্পাদকের উৎপাতে আওয়ামী লীগ এখন তার মহিমা হারাতে বসছে। তাই সহসম্পাদক নিয়োগের বিষয়টি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই এবার দেখভাল করবেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলনের সার্বিক নিরাপাত্তা নিশ্চিত করতে আগে থেকেই সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সম্মেলনের ভেন্যু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আগামী ১ অক্টোবর থেকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। ওই দিন থেকেই সেখানে স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটি ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।
শুক্রবার সকালে সম্মেলনের প্রস্তুতি উপলক্ষে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সভায় এ সব তথ্য জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি অতিথিরা থাকবেন। একটি শৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে পারলে সম্মেলন সার্থক হবে।আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে জাঁকজমকপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি অতিথিসহ ৩০ হাজারের মতো কাউন্সিলর ও ডেলিগেট এই সম্মেলনে অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে সম্মেলনের নিরাপত্তার দিকটাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এজন্য সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির এ সভা আহ্বান করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এ উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম।সভায় বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, সম্মেলনের সার্বিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্মেলনের ভেন্যু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগে থেকেই নজরদারির মধ্যে আনা হবে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। ওই দিন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটি ক্যাম্প স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলেও তিনি জানান।বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সম্মেলনের দিন ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করা হবে। সেখানকার শৃঙ্খলা রক্ষা এবং কাউন্সিলর ডেলিগেটরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে সম্মেলনের ভেন্যুস্থলে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। প্রবেশ পথগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় অন্যান্য যে সব উপ-কমিটি রয়েছে সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।