গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান কারাগারে বন্দি অধ্যাপক এম এ মান্নানকে জয়দেবপুর থানার নাশকতার আরো একটি মামলায় ফের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি শেষে বিচারক তাকে গ্রেফতারের আদেশ দেন। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট ২৭টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে আদালত থেকে ইতোমধ্যে তিনি ২৬ মামলায় জামিন লাভ করেন।
গাজীপুর আদালতের ইন্সপেক্টর মো. রবিউল ইসলাম জানান, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে গত ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বড়বাড়ি এলাকার রুপা গার্মেন্টসের সামনে জামায়াত ও বিএনপি’র কর্মীরা ঢাকাগামী বন্যা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এঘটনায় পরদিন জয়দেবপুর থানার এসআই সৈয়দ হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪০-৫০ জন জামায়াত-শিবির ও বিএনপি’র কর্মীদের আসামী করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারা মোতাবেক ক্ষতিসাধন করতঃ যানবাহনের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করার অপরাধে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্তকালে ওই ঘটনার সঙ্গে অধ্যাপক এমএ মান্নানের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই মামলায় অধ্যাপক এমএ মান্নানকে গ্রেফতারের জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে বিকেলে শুনানি শেষে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল হাই ওই আবেদন মঞ্জুর করে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতারের (শোন এরেস্ট) আদেশ দেন। এনিয়ে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে মোট ২৭টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ২৬ মামলায় জামিন লাভ করেন।
অধ্যাপক এম এ মান্নানের প্রধান আইনজীবী মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, অধ্যাপক এম এ মান্নানকে এ পর্যন্ত মোট ২৭টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ২৬ মামলায় জামিন লাভ করেন। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় দায়ের করা নাশকতার একটি মামলায় [১৩৩(১)১৫] গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভের পর বৃহস্পতিবার আরো একটি মামলায় [১১৬(১)১৩] তাকে ‘শোন এ্যারেষ্ট’ দেখানো হলো। বর্তমানে অধ্যাপক এমএ মান্নান গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ রয়েছেন। তিনি বিএনপির সদ্য ঘোষিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোট ২২টি মামলায় ১৩ মাস কারাবরণের পর গত ২ মার্চ অধ্যাপক এমএ মান্নান জামিনে কারামুক্ত হন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে কয়েক সহযোগিসহ অধ্যাপক এমএ মান্নানকে আবারো গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন গাজীপুরের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। ইতোপূর্বে তিনি আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৬টি মামলার সবক’টিতে জামিন লাভ করেন। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর জয়দেবপুর থানার নাশকতার একটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভের পর বৃহস্পতিবার তাকে ফের একটি নাশকতার মামলায় শোন এ্যারেষ্ট দেখানো হলো। এসব মামলার প্রায় সবগুলোই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালকালে গাড়ী ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, হত্যা, নাশকতা, বিস্ফোরক ও পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দানসহ বিভিন্ন আইনে দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’টি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত নাশকতার মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় গত বছরের ১৯ আগস্ট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। তার অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।