বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় রাষ্ট্রের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কৌশলগত কারণে আগামী বৃহস্পতিবার প্রকাশ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বুধবার সচিবালয়ে ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী জানান, ‘এ মুহূর্তে আইনমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আর টাকা যেহেতু ফেরত আসছে এবং ফিলিপাইনের আদালতে বাংলাদেশের করা মামলার রায় যেহেতু আমাদের অনুকূলে আসছে, তাই রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ মুহূর্তে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। তাই আমরা এটা এখনই তা প্রকাশ করছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাইপলাইনে আরও ৮০ মিলিয়ন ডলার আছে। সেটিও আমরা ফেরত পাবো। তাছাড়া যে টাকা সেদেশের ক্যাসিনোতো গেছে তাও আমরা ফেরত আনার চেষ্টা করছি।’ মুহিত বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে তিনি বাংলাদেশের আসবেন না।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। এরমধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতেই আটকে দিলেও পরে তা ফেরত দেয়। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের জুপিটার শাখার কয়েকটি হিসাব থেকে চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে। ফিলিপাইনের বিভিন্ন সংস্থা চুরি যাওয়া অর্থের কিছু অংশ নানাভাবে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া সেই অর্থের মধ্য থেকে ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফেরত পেতে ফিলিপাইনের আদালতে বাংলাদেশের একটি আবেদন বিচারাধীন ছিল। বাংলাদেশের হয়ে আবেদনটি করে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) ও ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস।
এ ঘটনায় গত ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এরপর ৩০ মে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পরে তা ‘পড়ে দেখে’ প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এরপর ওই প্রতিবেদন প্রকাশে বেশ কয়েক দফা সময় দিলেও তিনি তা প্রকাশ করতে পারেননি।