বিএনপি
বিএনপি

নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায় বিএনপি। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। গৃহপালিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সরকারের সুবিধামতো সাজানো নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না তারা। বর্তমান ইসির মতো আজ্ঞাবহ নতুন নির্বাচন কমিশন মেনে নেওয়া হবে না বলে সরকারকে আগাম হুঁশিয়ার করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন।বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নবম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর বিএনপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখাংল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, অবশ্যই নির্বাচন চাই। অবশ্যই একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ও স্বাধীন নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা সেই নির্বাচন চাই।গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে আপনি নির্বাচন পরিচালনা করবেন, আপনি আপনার মতো করে সব কিছু সাজিয়ে নেবেন, সেই নির্বাচনে আমরা বিশ্বাস করি না। সার্চ কমিটি করেন, আর যাই করেন, জনমতের বাইরে গিয়ে কোনো কমিটি এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।আগামী ফেব্র“য়ারিতে কাজী রকিবের ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে, যে কমিশনকে সরকারের অজ্ঞাবহ বলে আসছে বিএনপি। তাদের অধীনে সংসদের কোনো উপ-নির্বাচনে যায়নি বিএনপি, তবে স্থানীয় নির্বাচনে গিয়েছিল। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আনিসুল হক বলেছিলেন, আগের মতোই সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিলেও ২০১২ সালে সর্বশেষ কমিশন হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। তখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপেও বসেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল¬ুর রহমান।অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন কমিশন গঠনে এখন সার্চ কমিটি গঠনের মুলা ঝুলিয়েছে। সার্চ কমিটি কে গঠন করবে, রাষ্ট্রপতি? সেটা অনুমোদন দেবেন কে, প্রধানমন্ত্রী?তাহলে সেই সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ হবে, একজন ব্যক্তিত্বশালী লোক নির্বাচন কমিশনের বসাইবেন, এটা আমরা বুঝি কী করে?সার্চ কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনীত করার প্রস্তাব দেন গয়েশ্বর।সকল রাজনৈতিক দল মিলে পাঁচজন নির্বাচন কমিশনের সদস্য নির্বাচন করুক। রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর করবেন। এটা একটা পথ হতে পারে।তা নাহলে এই সার্চ কমিটি দিয়ে, আরেকটা রকিবউদ্দীন মার্কা নির্বাচন কমিশন করলে সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না,বলেন আমীর খসরু।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আবার সেই সার্চ কমিটির নাটক শুরু হয়েছে।সার্চ কমিটির নাটকের ফলাফল কয়েকবছরের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বুঝে গেছে। আবার সেই কমিটি দেশের মানুষকে প্রতারণা করার জন্য।এই সার্চ কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগ, পরিচালনায় আওয়ামী লীগ, অভিনয়ে হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই নাটকের কোনো দর্শক নাই। বাংলাদেশের মানুষ এই নাটক আর গ্রহণ করবে না। এটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।

রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে খালেদা জিয়ার নবম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা ইসি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করেন।১/১১ প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফখরুদ্দীন-মঈনদের অবৈধ সরকারের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করা। সেদিন তাদের কথা মতো বিএনপির চেয়ারপারসন যদি দেশের বাইরে চলে যেতেন, তাহলে শেখ হাসিনা কোনো দিন দেশে ফিরতে পারতেন না, প্রধানমন্ত্রীও হতে পারতেন।গণতন্ত্র ও দেশ রক্ষায় খালেদা জিয়া অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেন কুশিলবরা বার বার খালেদা জিয়াকে বলেছেন- আমাদের সঙ্গে আপস করুন, আপনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিচ্ছি। কিন্ত খালেদা জিয়া দেশ ও গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করে তাদের সঙ্গে আপস করেননি।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার খালেদা জিয়া ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। এরপর থেকে এই দিনটিকে কারামুক্তি দিবস হিসেবে বিএনপি পালন করে আসছে।বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে খালেদা জিয়ার ভূমিকা তুলে ধরে বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মামলার সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব ফখাংল। পবগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৯টা মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। যতই মামলা দেন, যতই জেলে দেন, দেশের মানুষ কখনই আপনাদের দমননীতিকে মেনে নেবে না।

তিনি আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে বলেন, সরকার জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে সকল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে ১০ জনের সন্ত্রাস দমন কমিটি করা হয়েছে।এই কমিটিগুলো এখন তালিকা তৈরি করছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বলছে, এত টাকা দাও, তাহলে তোমার নামে জঙ্গির মামলা দেওয়া হবে। আজকে এভাবে তালিকা করে নতুন করে তারা নির্যাতন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে।উদ্দেশ্য একটাই বিরোধী দল, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে। ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তারা ভিন্ন মোড়কে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে, বলেন ফখরুল।ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্েয নজরুল ইসলাম খান, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য রাখেন।